শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

বই- ভূতের নাম হাবা গঙ্গারাম

লেখক-ইমদাদুল হক মিলন
ধরন- কিশোর উপন্যাস
পৃষ্ঠা-৭৬
মূল্য-৫৫
নিউ শিখা প্রকাশনী
...
ভুতটার নাম হাবা গঙ্গারাম।  নাম যেমন ঠিক সেরকমেই সে। একেবারে গবেট টাইপের।  মাথায় ঘিলু বলতে কিচ্ছু নেই  হদ্যবোকা আর বেজায় অলস।কাজ তার একটাই আঙুল চোষা। বাহাতের বুড়ো আঙুল চুষতে চুষতে এটাকে একেবারে কাটি বানিয়ে ফেলেছে। তাকে কেউ পছন্দ করে না। সে  না পারে ছোটদের  সাথে মিশতে না পারে বড় দের সাথে মিশতে। ভূতের নিয়ম হলো উল্টা,  তারা দিনের বেলায় ঘুমায় আর রাতে জেগে উঠে কাজ কর্ম করে।বোকা আর অলস বলে তার কোন নিয়ম কানুন নেই।

বোকা ভূত কে নিয়ে মা বাবার খুব চিন্তা।  ভূত বংশে জন্মেও সে ভূত হতে পারছেনা। এই বয়সী ভূতেরা কত কিছু করে, সে কিছুই করে না। একমাত্র ছেলে না হলে তাকে নিয়ে ভাবনার কিছু ছিলো না।   মরে গেলে ছেলেটির কি উপায় হবে এটা ভেবে তারা উৎকন্ঠিত। মাথায় ঘিলু থাকলে  ওসব বুদ্ধি পরমার্শ আর কায়দা নেড়ে চেড়ে  খাওয়া পরা চলে।   কিন্তু এই ভূতের তো কিছু নেই।
ভুতেরা জন্মসুত্রে দুইটা কায়দা পায়।   তা হলো রং বদলে ফেলা আর যা ইচ্ছা তাই হওয়া।  এ ভূতও পেয়েছে  কিন্তু কোন দিন তাকে এগুলো প্রয়োগ করতে  দেখা যায় নি।

একদিন ভূতের মা বাবা তাকে ডেকে বলল,  তার জীবন সে কিভাবে কাটাবে।  তার উত্তর ছিলো  আঙুল চুষে। আর বাড়ি এসে খাবার খেয়ে। তখন তার মা বাবা বলল,  তারা যখন মারা যাবে তখন তো আর ঘরে খাবার থাকবে না  তখন সে কি করবে।  মা বাবার মুখে মারা যাওয়ার কথা শুনে সে তো ভীষণ রাগ! রেগে বলল সে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। কেন তারা এটা বলল,  তাদের সাথে আর থাকবে না। সে চলে গেল। 
মা ভূত টা কাদঁতে থাকলো।  বাবা ভূত টা বলল,  যাবে কোথায়?  আহার না জুটলে ঠিকি ফিরে আসবে।  এদিকে ভূত টা সারা রাত ধরে হেটে চলল আর আঙুল চুষতে থাকল।

ভোরের দিকে সে অচিনপুর গ্রামে এসে দাড়াল। এসেই দেখা হল খনকার বাড়ির ছেল কাবুল এর সাথে। সে তখন গাছের গুড়িতে বল ছুড়াছুড়ি খেলছিল।  খেলছিল আর হাসছিল। হঠাৎ বল টা গাছে না লেগে  ঝোপের আড়ালে চলে গেল।  কাবুল খুজতে থাকল।  কিন্তু বলটি নেই।  কাবুল কাঁদ কাঁদ করে তাকিয়ে থাকলো।  তখনি সামনে এলো ভূত টা।  মুখে বা হাতের আঙুল। কাবুল প্রথমে বুঝতে পারে নি এটা ভূত। সে ভেবেছিলো এটাও বুঝি ঝোপের  অংশ।  তাই বল খুজতে ভূতের শরীলে হাত দিয়ে বসে।

তখন ভূত কথা বলা শুরু করল।  কাবুল এর মুখ টা ছিলো দেখার মতো। জানতে চাইলো কে তুমি। ভূত বলল,  আমি ভূত।  কাবুল এর বিশ্বাস হলো না। প্রমান দিতে বললে ভূত বলল, সে যে নাকি সুরে কথা বলে এটাই তো প্রমান।  তখন কাবুলের বিশ্বাস হলো। কাবুল ভূত কে তার বাড়ি নিতে চাইলো।  ভূত বলল তার খিদে পেয়েছে। কাবুল জানালো,  সে যা খেতে চাইবে তাই খাওয়াবে। ভূতটা খাবার লোভে তাদের বাড়ির দিকে পা বাড়াল।

এ পর্যন্ত পড়ে আপনার কি মনে হচ্ছে না, ভূত বাড়ি গেলে বিশাল এক ব্যপার হয়ে যাবে...! মনে নাও হতে পারে।  আমি কিন্তু বুঝেছিলাম বোকা হলে কি হবে সে কিন্তু ভূত।  মানুষ নয়।  সুতারং কিছু একটা হবে।
সত্যি তাই,  যেখানে হাঁবা গঁঙ্গারাম আছে,  সেখানে বিশাল ব্যাপার না হয়ে যায় না।  কি হয় নি..?  হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি না এলে আমার নামের  একটা অংশ  কেটে দিব।

কেন এত বড় রিক্স নিলাম..!? সন্দেহ নেই।  আপনি হাসবেন,  এবং চোখ দিয়ে পানি গড়াবেই।  ততটা না হলেও এক সময় বলবেন, আর হাসতে পারব না। এটাই আমার সফলতা। একটা সিক্রেট বলি,  এই বইটা আমার মগজ টা কে একেবার ফ্রেশ করে  ইয়ার ফ্রেসনার এর  সুগন্ধি দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যা বেলায় মনে হচ্ছিল আমি বোধ হয় কারো নাক ফাটিয়ে দিব।  কিন্তু এ হলো রিভিউ লেখার গুন! লিখতে গিয়ে দেখতে হল। বাধ্য হয়ে ভূতের কবলে পড়লাম।  তাও আবার বোকা ভূত! 

বইটা একটা কিশোর সমগ্র।  এটা আমি উপহার পেয়েছিলাম আমার  দুসম্পর্কের দাদুর কাছে।  সমগ্রের তিন নাম্বার উপন্যাস এটা। মাঝে মাঝে মগজ টাকে স্বস্থি দিতে খাট্টাখোট্টা সাহিত্য থেকে এসব  কোমল বই গুলো চেখে দেখতে হয়।   তাঁ নাঁ হঁলে যেঁ কোঁন দিঁন  আঁপনার মাঁথাও হ্যাঁঙ্গ কঁরবে। তাঁই সাঁবধান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন