বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭

বই-চিঠি

লেখক-মুনীর চৌধুরী
ধরন-নাটক
পৃষ্ঠা-৯২
মূল্য-১৫০
শোভা প্রকাশনী। 
আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী, বাগ্মী এবং শহিদ বুদ্ধিজীবী। তিনি ছিলেন ইংরেজ আমলের একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরীর চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়।
চিঠি নাটকের কাহিনী শুরু হয়েছে, একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে। সোহরাব, খালেদ ও তারেক, তিন সহপাঠী বন্ধু -তারা হোস্টেলের একই রুমে থাকে।সোহরাব মেধাবী ছাত্র।তাদের সাথে পড়ে মীনা ও রুমা। মীনাও মেধাবী ছাত্রী। সোহরাবের একটি টিউটোরিয়াল খাতা তারেকের কাছ থেকে জোর করে নিয়ে নেয় মীনা। খাতাটির মধ্যে একটি চিঠি ছিলো । যার সম্মোদনে তাহমিনা লেখা আর ইতি রুস্তম ।
চিঠিতে তারেকের ব্যাকুল প্রেমানুভূতি প্রকাশ পায়। কিন্তু এতে হাতের লেখা ছিলো খালেদের। এই খাতা নিয়ে তিন বন্ধুর অস্তিরতা কেন না সোহরাব ভাবছে, যেহেতু তার খাতা মীনা ভাববে এটা সে লিখেছে। খালেদের হাতে লেখা তাই সেও চিন্তিত। আবার তাহের ভাবছে তার হাত থেকে খাতা টা নিয়েছে। তাই হয়ত এটা তার ভাবতে পারে।ভোর রাত পর্যন্ত তাদের মধ্য আলোচনা চলে। তাছাড়া সোহরাবের টিউটোড়িয়াল খাতা দিয়ে মীনা ভালো রেজাল্ট করবে এটাও একটা ক্ষোভ সোহরাবের। পুরো নাটকে তাদের দন্ধ।
এটা গড়াতে থাকে। একে বারে বিশ্ববিদ্যালয় এর আন্দোলন পর্যন্ত। তাদের পারস্পারিক জিদ রাগ ও ক্ষোভের প্রকাশ পেল আন্দোলনে। পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে অনেকে কিন্তু সোহরাব ও মীনা দুজনের মাঝে কেউ চায় না পরীক্ষা পিছিয়ে যাক। হঠাৎ আফতাব নামের এক ছেলে মীনার ব্যক্তিগত কতো গুলো খাতা নিয়ে রুমে তালা বন্ধি করে রাখে। সোহরাব তালা ভেঙ্গে খাতা গুলো নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসে। এবং দুজনের ঈর্ষার ফলে মীনা সোহরাবের বিরূদ্ধে চলে যায়।
 এরকম শোচনীয় অবস্থায় চলতে থাকে নাটকের গতিপথ।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে সমস্যার যে তীব্র অবস্থা। এবং ছাত্র রাজনীতির যে অবক্ষয় তা উঠে এসেছে চিঠি নাটকে। নাট্যকার তখন কার সময়ে ছাত্র রাজনীতিতে অস্র ব্যবহার থেকে কিছুটা হালকা করে চিঠি নাটকে ছাত্রদের উত্তাল ঢেউ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ের প্রক্ষিতে বিচার করলে। দেখা যাবে, নাটকের বিষয় ভয়াবহ রকম তাৎপর্য মন্ডিত। আরেক গুরুত্বপূর্ন প্লট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পরীক্ষার তারিখ পিছানো। এ দেশে হঠাৎ করে সব আইনের আওতায় চলে আসে। মনে হয় যেন আইনের বাইরে কখনো কিছু করা হয় না।
চিঠি নাঠকের চরিত্রের দিকে দৃষ্টি দিলে, সোহরাব নাট্যকারের সযত্নে সৃষ্টি। চরিত্রটি মেধায়, বুদ্ধিতে ও প্রেমে উজ্জ্বল।ঠিক সময় পরীক্ষা এবং ভালো রেজাল্টে সে আশাবাদী।তার খাতা মীনা নিয়ে যাওয়ায় তার থেকে মীনা বেশি শিখে ফেলবে এমন ভাবনা তাকে অস্থির করে ফেলে। মীনা বদমেজাজী টাইপের চরিত্র। সব কিছুতে সোহরাব তার প্রতিদ্বন্দ্বী। সে সোহরাব কে সহ্য করতে পারে না। তাকে পার করে যাবার ইচ্ছা মীনার। মীনা যথেষ্ট বুদ্ধমতি মেয়ে। ক্লাসেও সে দাড়ুন মেধাবী। সব চরিত্র গুলো বাদে আরো একটা চরিত্র মুখ্য হয়ে আছে। ।তিন হলেন মীনার ভাই আসদুজ্জামান।
নাটকের সাফল্য নির্ভর করে সংলাপ এর উপর। চিঠি নাটকের বড় সম্পদ এর তীক্ষ্ম বুদ্ধি দীপ্ত সংলাপ। কখনো সংগ্রামী আদর্শের উত্তাপ, কখনো বন্ধুর সাথে বন্ধুর ঝগড়া। আবেগের ছাপটা কাব্যিক সুরের নাটকে নির্বাচন করা যায়।

1 টি মন্তব্য: