লেখক- উৎপল দত্ত
ধরন-নাটক
পৃষ্ঠা-১২৩
মূল্য-১৬০
ঝিনুক প্রকাশনী।
ধরন-নাটক
পৃষ্ঠা-১২৩
মূল্য-১৬০
ঝিনুক প্রকাশনী।
উৎপল দত্ত হলেন একজন বাঙালি অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক ও লেখক। তার জন্ম অবিভক্ত বাংলার বরিশালে । তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ইংরেজি বিষয়ে পড়াশোনা করেন।উৎপল দত্ত প্রথম দিকে বাংলা মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন। তাঁকে গ্রূপ থিয়েটার অঙ্গনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের অন্যতম হিসাবে গন্য করা হয়। কৌতুক অভিনেতা হিসাবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তিনি কৌতুক চলচ্চিত্র গুড্ডি, গোলমাল ও শৌখিনে অভিনয় করেছেন। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় হীরক রাজার দেশে, জয় বাবা ফেলুনাথ এবং আগন্তুক সিনেমায় অভিনয় করেছেন । রাজনৈতিক দর্শনের দিক থেকে তিনি ছিলেন বামপন্থী ও মার্ক্সবাদী।
উৎপল দত্তের বিখ্যাত নাটকের মধ্যে রয়েছে টিনের তলোয়ার, মানুষের অধিকার ইত্যাদি।
উৎপল দত্তের বিখ্যাত নাটকের মধ্যে রয়েছে টিনের তলোয়ার, মানুষের অধিকার ইত্যাদি।
উৎপল দত্তের টিনের তলোয়ার নাটকে উঠে এসেছে, উনবিংশ শতাব্দীর পটভূমিকায় ইংরেজদের সাহায্যে হঠাৎ করে বড়লোক হওয়া বাবুদের অনৈতিক ব্যভিচার এবং থিয়েটারের পৃষ্ঠপোষকতার আড়ালে বেলেল্লাপনা করা। শিল্পীদের দাস মনে করা। বিদেশীদের শাসন ও অত্যাচার এবং এদের বিরুদ্ধে শিল্পীদের প্রতিবাদ।
নাটকের মূল চরিত্র নাট্যদল গ্রেট বেঙ্গল অপেরার বেনীমাধব। মধুসূদন, দীনবন্ধু, ও গিরিশ ঘোষের জীবন দর্শন দ্বারা প্রভাবিত বেনীমাধব সাহিত্য এবং সমাজ সম্পর্কে সচেতন। বেঙ্গল অপেরা শোভাবাজারে নতুন একটি পালার মহলা শুরু করে। তার নাম ময়ুরবাহন। কাশ্মীর যুবরাজ ময়ূরবাহনের কাহিনী নিয়ে নাটক টি লেখা। এই পালার নায়কের কোমরে দেখা যায় টিনের তলোয়ার । তার উদ্দেশ্য পিতার হত্যা কারী বিক্রমদেবকে হত্যা করা। বেনীমাধব এই পালার মূল আকর্ষন দলের সবাই কে বুঝাতে চায়। এমন কি পথে পোস্টার লাগাতে যাওয়ার সময় দেখা হওয়া মেথরকেও পালার বিবরনী শোনায়। মেথর শুনে বলে, মুখে রং মেখে এরকম ঢং করে রাজার উজীর সাজে কেন? এত পড়ালেখা করে টিনের তলোয়ার নিয়ে ছেলেমানুষী করে কেন? সে কি পারবে যুবরাজ কে ছেড়ে তাকে নিয়ে নাটকের কাহিনী বর্ননা করতে?
নাটকে অপেরা থিয়েটারের নায়িকা হলো ময়না। সে চাষীর মেয়ে। বেনীমাধব তার গলায় গান শুনে তাকে পছন্দ করে নাটকের নায়িকার জন্য।
অপেরা নাট্যদলের স্বত্বাধিকার হলেন বীরকৃষ্ণ বাবু। সে সমাজে প্রতিপত্তিসম্পন্ন ব্যক্তি। রূপার গ্লাসে মদ খায়। শহরের বিভিন্ন স্থানে তার বাড়ি। তাকে সবাই সম্মান করে। সে নাটকের নায়িকা ময়নাকে পেতে চায়। বিনিময়ে বেনীমাধব কে সে স্বত্বাধিকারী করবে বলে কথা দেয়।
বেঙ্গল থিয়েটারের পাশাপাশি, ন্যাশনাল থিয়েটার, ওরিয়েন্টাল থিয়েটার এমন আরো কয়েকটা নাট্যদলের টিকে থাকার লড়াইও তুলে ধরা হয়েছে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম হিসেবে টিনের তলোয়ারকে প্রতীক করা হয়েছে।
চরিত্র বিচারে বেনীমাধব অপেরার পরিচালক। তাকে নাট্য ব্যক্তিত্বে বাংলার গ্যারিক উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। উনিশ শতকে বাংলার নাট্য মঞ্চের সাথে মঞ্চের লড়াই টিকে থাকার চিত্র গুলোতে যুক্ত ব্যক্তিজীবন এর যে ট্র্যাজেডি তা বেনীমাধব এর মাঝে পাওয়া যায়। সে শুধু নাট্যদলের পরিচালক নয়। জুতো সেলাই থেকে শুরু করে চন্ডীপাট পর্যন্ত সব টাই তার সামলাতে হয়। নাটক তার নেশা। মদপান করা তার অভ্যাস।
মদপান করে সব সময় কিন্তু তার নেশা হয় না। মদপান করেই সে মঞ্চে উঠে। তাকে দেখে মাতাল লম্পট মনে হলেও নাটকের শেষ দিকে পাঠকের ভূল ভাঙবে। সে হচ্ছে শুদ্ধ শিক্ষক। তার নাটকের নায়িকা মানদা সুন্দরী অন্য নাট্যমঞ্চে চলে যাওয়ায়। সে এক অশিক্ষিত মূর্খ ময়নাকে তার নাটকের নায়িকা বানায়। ময়নাকে বেনীমাধব ধৈর্য এবং পারঙ্গমতা দিয়ে প্রশিক্ষন দেয়। এক সময় বেনীমাধব সার্থক হন গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানাতে। তিনি নাট্য মঞ্চের ভালোর দিকে চেয়ে প্রিয়নাথের পলাশীর যুদ্ধের পান্ডুলিপি এমনকি তিতুমীরের নাটক ফিরিয়ে দেয়। কেন না সে জানে ইংরেজ শাসনে মঞ্চে এ নাটক হলে তার নাট্যদল বন্ধ হয়ে যাবে। নাটকে বেনীমাধব হলো এক ট্র্যাজেডি। ঠিক কি কি কারন তা নাটকেই উপস্থাপিত।
নাটকে ময়না চরিত্র টাও বিশাল বড় ভূমিকা রাখে। তাকে ঘিরে প্রিয়নাথ, বসুন্ধরা আর বেনীমাধব। টিকে থাকার লড়াইয়ে সেও এক অগ্রপথিক।
বীরকৃষ্ণ বাবুর চরিত্র বিচারে তিন একজন ইংরেজ দাস। সংঘত কারনেই সে নাটকে অনৈতিক চরিত্র।
এছাড়াও আছে প্রবীণা অভিনেত্রী বসুন্ধরা সে ময়নাকে নিজের মেয়ের মতো দেখে। সে চায় ময়না মঞ্চ ছেড়ে প্রিয়নাথের সাথে সংসার করুক। প্রিয়নাথ মল্লিক পেশায় নাট্যকার। সে অপেরার নতুনত্ব আনতে চায়। সে খুব খেটে খুটে পলাশীর যুদ্ধ নাটকটি লেখে। সে চায় রবার্ট ক্লাইভের মুখোশ তুলে ধরতে। কিন্তু বেনীমাধব তা দেখেনি।
এছাড়াও আছে প্রবীণা অভিনেত্রী বসুন্ধরা সে ময়নাকে নিজের মেয়ের মতো দেখে। সে চায় ময়না মঞ্চ ছেড়ে প্রিয়নাথের সাথে সংসার করুক। প্রিয়নাথ মল্লিক পেশায় নাট্যকার। সে অপেরার নতুনত্ব আনতে চায়। সে খুব খেটে খুটে পলাশীর যুদ্ধ নাটকটি লেখে। সে চায় রবার্ট ক্লাইভের মুখোশ তুলে ধরতে। কিন্তু বেনীমাধব তা দেখেনি।
টিনের তলোয়ারের মূল উপস্থাপন হলো তখন কারর সমাজে ইংরেজ বিরোধী দেশপ্রেম আর ইংরেজ পৃষ্ঠপোষক কীট গুলোর অবস্থা। টাকা আর প্রতিপত্তিতে যারা মানুষকে পন্য মনে করে। নাট্য মঞ্চগুলোর মধ্যকার টিকে থাকার লড়াইটাও নাট্যকার দেখিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন