লেখক-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ধরন-উপন্যাস
পৃষ্ঠা-২২৪
মূল্য-২০০
শোভা প্রকাশনা।
সুরেশ ও মহিম দুজন বন্ধু। পরীক্ষা পাশের পর সুরেশ ডাক্তারি পড়ার জন্য মেডিকেলে ভর্তি হলো। আর মহিম তার পুরানো সিটি কলেজেই থেকে গেল। কারন সুরেশ উচ্চবিত্ত, তাদের সমস্থানীয় মহিম নয়। সে অনুপাতে তার পড়ার খরচ চালাবারও যোগান সে দিতে পারত না। একদিন সুরেশ মহিম কে ইচ্ছা মতো গাল দিল, মেডিকেলে ভর্তি হয়নি বলে। সে মহিম কে শুধু বন্ধু জ্ঞান করেনা। তার নিজের একাংশ ভাবে। হঠাৎ সে জানতে পারে মহিম এক ব্রাক্ষ্মকন্যা কে পছন্দ করে। সুরেশ ব্রাক্ষ্মদের একেবারেই দেখতে পারে না। কেন না তার মতে, তারা হিন্দু ধর্মকে অস্বীকার করে। এবং নিজেদের ইচ্ছা মতো ধর্ম বানিয়ে তা মেনে চলে। ঠিক যখন এটা জানাল তখনি সে মহিম এর খোঁজে বের হলো তাকে নিষেধ করার জন্য।
মহিম এর কোন খোঁজ না পেয়ে সেই ব্রাক্ষ্মন কন্যা অচলার বাড়ি গিয়ে হাজির হলো। অনেক কথা হলো অচলা ও তার বাবা কেদার মুখোপাদ্যায় এর সাথে। কথা প্রসঙ্গে সে মহিম এর দারিদ্রতা বর্ননা করলো। এমন কি আরো বহু কথা বলল মহিমের অগোচরে। যাতে ওরা সড়ে যায়। কিন্তু বিপত্তি হলো অন্য জায়গায়। মহিমকে নিষেধ করলো ঠিকি কিন্তু অচলা কে দেখে নিজেই আকৃষ্ট হলো।
অচলার বিচার বুদ্ধি এবং রূপের আড়ালে হারিয়ে ফেলল তার বিবেক। এ থেকেও অচলার বাবার কাছে মহিমের বিরুদ্ধাচারন করল। এতে অচলার বাবা মহিমের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এবং তাকে মিথ্যাবাদী ভাবল, অচলাকে বলল মহিম যেন তার বাড়িতে আর না আসে। এখান থেকেই মূলত উপন্যাসের মূল যাত্রা। তিনজনের এক ত্রিভূজ প্রেম কাহিনী বিদ্যমান উপন্যাসে।
সুরেশ ডাক্তারি পড়াশুনা করে। অবাল্য বন্ধু মহিম কে সে অনেক বার সাহায্য করেছে।বন্ধুর জন্য সে প্রান পর্যন্ত দিতে পারে। সে ভগবান মানে না কিন্তু সমাজের প্রতি এবং মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।সে যাকে ভালবাসে তার বিপদে, তার মাথা ঠিক থাকে না।মানুষের সাহয্যে সদাহস্ত। ফয়জাবাদ শহরে আগুন লাগলে এক মহিলাকে বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করে আগুনে ঝাঁপিয়ে পরে। প্লেগ রোগীদের সে অর্থ , ঔষুধ পত্র দিয়ে সহায়তা করে। সে ধনীবাবার পুত্র। এদিক থেকে অচলার বাবার কাছে সে দেবতুল্য।
মহিম দরিদ্র এবং উপন্যাসের শুরু থেকেই সে ম্রিয়মান এবং অন্যের দরদ ভালবাসা আর করুনা আদায় করে নেয়। তার এই দরিদ্রতায় মধ্যেও একটা উজ্জ্বল আলো আছে।টাকার অভাবে সে মেডিকেলে পড়তে পারেনি।সে ধীর, স্থির,নিস্তব্ধ, নিশ্চুপ চরিত্রের অধিকারী। অচলার ভাষামতে, "মহিম মিথ্যা বলে না সে কসাই নয়- কাজপাগল আর মিতবাক" এথেকেই তার চরিত্র ফুটে উঠে।
আর অচলা হলো এ উপন্যাসের নায়িকা। সে মাতৃহারা ব্রাক্ষ্মন কন্যা। সুরেশ এর মতে, শুকনো কাঠপনা চেহারা, বই মুখস্থ করে, গায়ে কোথাও এক ফোঁটা রক্ত নেই, গলার স্বর চি চি করে।" কিন্তু তা দেখেও সুরেশের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল।
কাহিনীকে প্রেম কাহিনী বলা যায়। কিন্তু এতে ট্র্যাজেডি বিদ্যমান। গৃহদাহ শব্দের অর্থগত দিক থেকে উপন্যাসে কারো না কারো গৃহদাহ হয়েছে। একটা চরিত্র বরাবর মার খেয়ে গেছে। অন্যটা অভিনয় করেও উতরাতে পারেনি। সুরেশ বন্ধুর জন্য সব করতে পারবে এরকম ধারনা সত্বেও তার ভালবাসাকেই এক সময় টানতে থাকে। মহিম এর ম্রিয়মানে অচলা দ্বন্ধে পরে আসলে সে কাকে ভালবাসে। আর একটা চরিত্রের অধিপত্য আছে তা হলো অচলার বাবা।আবার মৃনাল চরিত্রটাও ফেলনা নয়। মৃণালের ব্যবহারে কেদারবাবু মুগ্ধ। তাছাড়া হিন্দু ধর্মের পুরো সংস্কার দেখা গেছে রামবাবু চরিত্র টাতে।
উপন্যাসে ভালোলাগার চরিত্র মহিম ই হওয়ার কথা তবুও মাঝে ওর উপর রাগ হয়েছিলাম বেশ। শরৎচন্দ্রের নায়ক গুলো হয় পোড়খাওয়া। সে দিক থেকে বলার কিছু নেই। সুরেশ পাঠকের দৃষ্টিআকর্ষন করবে উচ্ছলতার জন্য। কিন্তু সে যতোই উচ্ছল হোক না কেন, সে শুদ্ধ পুরুষ নয়।
অচলাকে আমি বুঝতে পারি নি। ওকে কোন দোষ ও দিতে পারিনা আবার মেনেও নিতে পারি না। সবকিছুর পর মহিমের জন্য আমার কষ্ট হয়। কেদার বাবুর জন্যও কষ্ট হয়। গৃহদাহ উপন্যাস কেন্দ্র করে সাধু মিত্র চলচ্চিত্রটি ১৯৬৭ সালে নির্মান হয়। সামাজিক ঘরনার উপন্যাস এই গৃহদাহ।
অচলাকে আমি বুঝতে পারি নি। ওকে কোন দোষ ও দিতে পারিনা আবার মেনেও নিতে পারি না। সবকিছুর পর মহিমের জন্য আমার কষ্ট হয়। কেদার বাবুর জন্যও কষ্ট হয়। গৃহদাহ উপন্যাস কেন্দ্র করে সাধু মিত্র চলচ্চিত্রটি ১৯৬৭ সালে নির্মান হয়। সামাজিক ঘরনার উপন্যাস এই গৃহদাহ।
গৃহদাহ শরৎচন্দ্রের সৃষ্টিতে একটি বিশেষ স্থান দখল করেছে। এটার মধ্যে স্থান পেয়েছে দ্বন্ধ। যার মূল হয়েছে বাস্তুবাদ এবং আদর্শবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন