লেখক-সেলিম আল দীন
ধরন-নাটক
পৃষ্ঠা-১৩৫
মূল্য-১৬০
মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশনী।
ধরন-নাটক
পৃষ্ঠা-১৩৫
মূল্য-১৬০
মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশনী।
সেলিম আল দীন বাংলা ভাষার আধুনিককাল পর্বের অন্যতম নাট্যকার। ১৯৯৫ সালে তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি এ দেশের নাট্যশিল্পকে বিশ্বনাট্য ধারার সঙ্গে সমপংক্তিতে সমাসীন করার লক্ষ্যে ১৯৮১-৮২ সালে তিনি এবং নাট্য-নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফ সারাদেশব্যাপী গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার।
বাংলাদেশের বিচিত্র শ্রমজীবি, পেশাজীবী, বাঙালি ও বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজজীবন ও তাদের আবহমান কালের সংস্কৃতিকে তিনি তাঁর নাটকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তিদান করেছেন। জীবদ্দশায় তিনি একজন নাট্যকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও সমকালীন বিশ্বের শিল্পধারায় নতুন নন-জেনরিক শিল্পধারার প্রবর্তনে সচেষ্ট ছিলেন। উল্লেখ্য, তিনি নাট্যকার পরিচয়ের বাইরে ছিলেন-একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, সংগঠক, নাট্যনির্দেশক এবং শিল্পতাত্ত্বিক।তাঁর রচিত হরগজ নাটকটি সুইডিশ ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
বাংলাদেশের বিচিত্র শ্রমজীবি, পেশাজীবী, বাঙালি ও বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজজীবন ও তাদের আবহমান কালের সংস্কৃতিকে তিনি তাঁর নাটকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তিদান করেছেন। জীবদ্দশায় তিনি একজন নাট্যকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও সমকালীন বিশ্বের শিল্পধারায় নতুন নন-জেনরিক শিল্পধারার প্রবর্তনে সচেষ্ট ছিলেন। উল্লেখ্য, তিনি নাট্যকার পরিচয়ের বাইরে ছিলেন-একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, সংগঠক, নাট্যনির্দেশক এবং শিল্পতাত্ত্বিক।তাঁর রচিত হরগজ নাটকটি সুইডিশ ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
কিত্তনখোলার আয়তন দীর্ঘ, কাহিনী বিস্তৃত ও ঘটনাবহুল, চরিত্র অসংখ্য।কিত্তনখোলাই নাট্যকারের প্রথম পূণাঙ্গ নাটক।নাটকের কেন্দ্রবিন্দু বাংলার হিন্দু মুসলমানের লোক জীবন, আচার ব্যবহার। এদের ঘিরে মেলা, যাত্রাদল, গ্রামের দুঃস্থ মানুষ, মহাজন, বেদে সম্পদায় ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রামীন জীবনের দ্বন্ধ কলহ, লেনদেন, প্রতিহিংসা, উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের যে দা কুমড়া সম্পর্ক, শাষক ও শোষিতের সম্পর্ক , প্রেম ভালোবাসা সবকিছুর চিত্র আছে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের যে কঠিন চিত্র, তা চিত্রায়িত করেছেন নাট্যকার। গ্রামীন সমাজের দুঃখ কষ্ট সম্বলিত এই নাটকের মূল ভিত্তি।
নাটকের প্রক্ষেপট একট গ্রাম কীত্তনখোলা। গ্রামের মেলায় আসা বিভিন্ন চরিত্রের সমাবেশ হলো এই নাটক। আশে পাশের গ্রাম হতে বিভিন্ন মানুষের আনা গোনা এই নাটকে। নাটকের শুরু মেলার বর্ননা দিয়ে। মেলাতে দোকানের বর্ননা দিয়ে।এর পর কাশেম আলির তাড়ির দোকানের বর্ননা। ঠিলা ও তাড়ির সম্পর্ক, মনাই বয়াতির কেচ্ছা, আজিব পঙ্কীর ডিম ও চরিত্র সোনাই এর সাথে পরিচয়, বনশ্রী- ছায়ারঞ্জন- রবিদাস দের কথা, বেদে লাউয়াদের কথা এভাবেই নাটকের কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে।
মূল চরিত্র বলতে টুইটাম গ্রামের সোনাই। সে অন্য সবার মতো মেলায় এসেছে। একসময় চাষী ছিলো। কিন্তু নাটকে দিনমুজুর হিসেবে দেখা মেলে। তার একসময় জমিজমা ছিলো, স্ত্রী চম্পাকে রাতে আলোমতির পুঁথি আর নদের চাদের কহিনী শুনাতো। ছেলে জন্মদিতে গিয়ে চম্পা মরে গেল। সেই থেকে সোনাই একা। তার মৃগী রোগ আছে।
ইদুর জন্ম গরিব ঘরে। না খেতে পেরে তার মা মারা যায়। এরপর গতর খাটে । কিন্তু একসময় তার অবস্থা পাল্টে যায়। ইদু এখন কিত্তনখোলা গ্রামের জোতজমিসম্পন্ন মানুষ। সোনাই তার কাছ থেকে চার হাজার টাকা ধার করে। ইদু তার টাকার বদলে জমি লিখে দিতে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু সোনাই জমি হারাতে চায় না।অপেরার অভিনেতা ছায়ারঞ্জন তার বন্ধু সম্পর্কীয়। মেলায় বেদের মেয়ে ডলিমনেরর সাথে তার প্রেম। তারা একে অপরকে পছন্দ করে কিন্তু তাদের মিলনের মুহূর্তেও বিরহ। কেন না ডলিমন তার সমাজ ছেড়ে কখনো তার কাছে আসতে পারবে না।
কাশেমআলীর তাড়ির দোকানে আড্ডার চিত্র দেখা যায়। সেখানে সোনাই তার দুঃখ গাথা খুলে বসে ছায়ারঞ্জন এর কাছে।
বনশ্রী নবযুগ যাত্রাদলের অভিনেত্রী। তার পিছনের ইতিহাস অন্ধকার। সে থান পাড়ার পতিতা ছিলো। এই যাত্রাদলের শ্রেষ্ট অভিনেতা রবিদাস তাকে পতিতা পল্লী থেকে তুলে আনে। এবং নতুন জীবন দেয়। বনশ্রী রবিদাস কে ভালবাসে। সে আর পিছনে যেতে চায় না। কিন্তু বাদ সাধে দলের মালিক সুবল ঘোষ। সে বনশ্রীর পিছনের অন্ধকার কে কাজে লাগাতে চায়। এরকম চরিত্র গুলো দিয়ে পূর্ণ কিত্তনখোলার ময়দান। এদের যোগ বিয়োগের ফলাফলেই শেষ হয় নাটকের শেষ দৃশ্য।
কিত্তনখোলা নাটকে একসাথে অনেক ধরনের মানুষ, তবে তাদের মধ্যে তেমন একটা ব্যবদান নেই। এখানে নাট্যকার রূপান্তর ঘটিয়েছেন প্রতিটি জীবনের। করো টা মৃত্যুতে, কারো জীবিকার তাগিধে। কিন্তু কারো কোন নির্দিষ্ট কোন স্থায়ী আশ্রয় নেই।
নাট্যকার নিজেই বলেছেন, "রূপান্তর কে আমরা এই নাটকে আবহমান কালের বাংলায় সর্বগ্রাসী বিষয় হিসেবে প্রত্যক্ষ করেছি। "সোনাইকে তিনি, এক জনমের নানা রূপান্তরের নায়ক বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের পরিচিত দেশ ও কালে দুঃখী মানুষকে বাঁচার জন্য সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। জীবিকার বদল করতে হয়। এই অনিশ্চিয়তা আর নিরাপত্তাহীনতার বাস্তবস্তাটাই ছিলো নাটকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন