বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭

বই-ভূতের নাম রমাকান্তকামার

লেখক-ইমদাদুল হক মিলন
ধরন-কিশোর উপন্যাস
পৃষ্ঠা-৮০
মূল্য-১৫০
অনন্যা প্রকাশনী।
ঘুমঘুমির মাঠে খেলা করতে এসে একটি ভূত পথ হারিয়ে ফেলল। অমাবশ্যার রাত । দোয়াতের কালির মতো অন্ধকার চারদিক। এই অন্ধকারে মানুষ তো দূরের কথা, ভূতেরাও ভালো দেখতে পারে না। ভূতের নিয়মে তার দিনের আলো ফোটে গেলে বাড়ি ফিরতে পারে না। মানুষ কিংবা অন্য কোন জীবের রূপ ধরে লোকালয়ে থেকে যায়। তারপর আবার যখন রাত হয় তখন ফেরে। কিন্তু এই ভূত টি নিয়ম কানুন এতো জানে না। কারন এটা বাচ্চা ভূত। ভূতেরা নিজেদের মানুষের মতো নাম রাখতে পারে না। তারা মানুষের নাম গুলো উল্টা করে রাখে। কিন্তু এই ভূতটার নাম মানুষের মতো হয়ে গেল। তার জন্মের পর তার মা বাবা এই নামটি লিখেছিল । ভূতের নিয়মে মানুষের নামটাই উল্টো করে রেখেছিলো রমাকান্ত কামার। কিন্তু এটা উল্টালেও হয়ে যায় রমাকান্ত কামার।
বাচ্চা ভূত ঘুমঘুমির মাঠে খেলা করতে এসে ভুলেই গেল রাত এক সময় শেষ হয়ে দিন শুরু হচ্ছে। রাত শেষ হওয়ার সামান্য আগে সে টের পেল, বাড়ি ফিরে যাবার পথটি সে হারিয়ে ফেলেছে। সঙ্গে সঙ্গে তার মাথা খারাপ হয়ে যায়। এদিক সে দিক ছুটা ছুটি করেও সে কোন কূল কিংবা কিনারা পায়নি। কারন ঘুমঘুমির মাট এর কোন এ মাথা ও মাথা নেই। এ মাঠের মাঝখানে ৩০০/ ৪০০ বছরের একটা বিশালল দেবদারু গাছ।গাছটির বয়সী কোন গাছ পাথারও নেই। মাথাটি একেবারে আকাশ ছুয়েছে।
রাত শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে পুবে দিকে ছুটতে ছুটতে আসে। দিনের আলো ফুটছে বলে রমাকান্তর বুক টিপ টিপ করছে।
ভূতেরা রূপ ধরতে পারে কিন্তু সেটা বয়স বাড়ার সাথে সাথে রূপের সংখ্যাও বাড়ে।রামাকান্ত তো ছোট তাই তার রূপের সংখ্যাও কম। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে তার। কি রূপ ধরবে তাই ভাবছে। অনেক কিছু ভেবে ভেবে সে ছোট বালকের রূপ ধারন করল আর ভাবতে লাগল তাকে নাপেয়ে তার মা হয়ত চিন্তা করছে। মায়ের কথা ভাবতেই তার কান্না পেল।নদীর তীরে বসে তখন রামাকান্ত কাঁদতে থাকল।
এদিকে সোনার গায়ের লালটুর কেতাবি নাম লালটু মহরাজ।এরকম অদ্ভুত নাম কেন তা সে নিজেও জানে না।মা বাবা মরেছে অনেক আগে। পৃথিবীতে আপন বলে তার কেউ নেই। একদিন ভেলায় ভাসতে ভাসতে সোনারঙ বাদ্যকর এর বাড়ি এসে উঠেছে।বাদ্যকরের এক পাল গরু। সে গরু দেখাশোনা করে। তবে লালটু দেখতে বেশ সুন্দর। ১১টি ডাকরা গরু নিয়ে সে ঘুমঘুমির মাঠে এসে চরায়। বাদ্যকর এর কাজ হচ্ছে দেশ গ্রামের উৎসব আনন্দে, পালা পার্বণে, বিয়ে সাদীতে, ঢোল ডাগর বাজানো। শহরে যেমন ব্যান্ডপার্টি বাজায়। গ্রামে তেমন বাদ্যকর। সারা রাত বাদ্য বাজায় তাই, বাদ্যকরেরা দিনে বেলা দেরি করে উঠে। লালটুর কোন চিন্তা নেই তাকে বাড়ির মহিলা গুলো খুব আদর করে। খায় দায় আর ঘুমায়।বাদ্যকরের বাড়ি ফেরার আগে সে গরু নিয়ে বাড়ি ফিরে।সে থাকে গোয়াল ঘরের পাশে ছোট কুড়ে ঘরে। গরুদের মধ্যে একমাত্র খয়রার ভাষাটা একটু বুঝে লালটু। সকাল হলে খয়রার ডাকে জেগে উঠে। প্রতি দিনের মতো, আজও খয়রা ডাকল। লালটু উঠে তারর গামচায় মুড়ি মুরকি বেধে ঘুম ঘুমির মাঠে রওয়ানা দিলো ।
কিন্তু নদীর পারে গিয়ে। গরু গুলি আর যেতে চাইলো না। সে যতই ঠেলতে লাগলো, ততই গরু গুলি জোর দেখাতে লাগল। সে অবাক হলো কেন না এর আগে গরু গুলি আর কখনো এরকম করে নি। সে নিজে এগিয়ে গেলো এবং নদীর ওপারে যাওয়ার পর ভাবল গরু গুলি বোধ হয় তার পিছু পিছু যাবে কিন্তু না তাও হয় নি। নদীর ওই পাড়ে গিয়ে লালটু তো হতবাক। কেন না তার মতে আরেক জন লালটু এখানে বসে আছে।
এর পর পাঠক রা বুঝতে পারার কথা কে সেখানে ছিলো। না বুঝলেও সমস্যা নাই বই পড়লে বুঝতে পারবেন। তা ছাড়া দুই লালটুর কর্মকান্ড গুলো ছিলো অসাধারণ। যেমন-
লালটু দ্বিতীয় লালটু কে এক বিরাশি কেজি ওজনের ধমক দিলো। সে টা কতো বড় হতে পারে এবার বুঝেন। লালটু চড় মারলো রমাকান্তকে কিন্তু সে চড় এসে লাগলো তার নিজের গালে।এরকম করেই চলতে লাগল তাদের বাইচলামি। বাইচলামির মানে টা লালটুর থেকে জেনে নিয়েন। কিশোর দের আনন্দ দেওয়ার জন্যই কিশোর উপন্যাস। এই ভূত বাচ্চাদের কাহিনী গুলো হয় অসাধারণ। কিছু শেখার জন্য মজা পাওয়ার জন্য বই গুলো পারফেক্ট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন