গল্প-ক্রয়টজার সোনাটা
লেখক-ল্যভ তলস্তয়
অনুবাদ-সমর সেন
পৃষ্ঠা-১৯৫
ল্যেভ তলস্তয় হলেন কালজয়ী রুশ ঔপন্যাসিক।শুধু মাত্র রুশ নয়, তাকে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক বলা হয়। তিনি দুইটি অনবদ্য উপন্যাস "যুদ্ধ ও শান্তি"এবং "আন্না কারেনিনা" এর রচয়িতা।ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন এক স্বচ্ছতার প্রতিলিপি। তিনি ধর্মীয় গোঁয়ার্তুমির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। প্রমাণ নিরীক্ষে তিনি সমাজের অন্ধ ধর্মীয় অনুশাসন মানতে বাধ্য হন নি কখনো। পাদ্রী- পুরোহিতদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে, শাস্তিস্বরূপ খ্রিস্টধর্ম থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি তার প্রতি উত্তরে বলেন, "যারা ঈশ্বর ও যীশুকে নিয়ে ব্যবসা করে, আমি তাদের চেয়ে সহস্রগুণ বেশি ধার্মিক খ্রিস্টান। তার মৃত্যুর সময়ও বহু পাদ্রী এসে ভিড় করলেও, দেশ ও বিদেশের হাজারো শোকার্ত মানুষ কোনরূপ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়াই তার শবযাত্রায় শামিল হয়ে তাকে সমাহিত করে। স্বৈরাচারী সম্রাটের শাসনে বিরুদ্ধাচারন করে স্বনামে ও বেনামে দেশের ভিতরে ও বাইরে জার শাসনের সমালোচনা করেন। কিন্তু শাসকবর্গ আরো বেশি সমালোচনার মুখে পড়ার ভয়ে তার বিরুদ্ধে কোনরূপ শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিতে পারেন নি। তিনি নীচু জাত থেকে শুরু করে রাজদরবারের লোকের সাথে অবলীলায় মিশে যেতে পেরেছেন। তিনি সততা আর দায়িত্ববোধের সংমিশ্রনে ব্যক্তিত্বের অধিকারী বিস্ময়কর এক উদাহারণ! তিনি ছিলেন ভাবুক টাইপের দার্শনিক। আর তার দর্শনের ফলে, তার রচনার অংশগুলো রূপকথা বা অবাস্তব বা রোমান্টিকতা শূন্য। তিনি তারই চিত্র এঁকেছেন যা তিনি বাস্তবসম্মত ভাবে অবলোকন করেছেন। সেই চিত্র গুলোই তার চোখে দৃশ্যায়িত হয়ে শিল্পের রূপ পেয়েছে। সামাজিক ভাবে, যে কোন রীতিনীতির উর্ধে ছিলেন। আইন শিক্ষা ছেড়ে দিয়ে একমাত্র ভাবুকতা আর দার্শনিকতার জোরেই লেখালেখিতে অগ্রসর হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের মতো তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। সঙ্গীত বিদ্যা ও অংকনেও তার হাত ছিলো। তলস্তয় এর রচনার পরিমান বিশাল। তার সকল রচনা মিলে ৯০ খন্ডে বিভক্ত।
সাহিত্যে তার প্রবেশ "শৈশব"নামক গল্প দিয়ে। তার বড় গল্প গুলোর মধ্যে অন্যতম "ক্রয়টজার সোনাটা।" কিন্তু এটা প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়। পৃথিবীর নিষিদ্ধ বই গুলোর মধ্যে অন্যতম এই ক্রয়টজার সোনাটা।আগেই বলেছি বাস্তব সম্মত উদাহারন ছাড়া, রূপকথা তলস্তয় এর শিল্পে অনুপস্থিত। তা ছাড়া তার যে কোন লেখার পেছনে থাকে রূঢ় বাস্তবতা। এই গল্পটাও এর বহির্ভূত নয়।
গল্পের কাহিনী প্রতিলিপি হয়েছে এক বৃদ্ধের কাহিনী দিয়ে, কি সেই কাহিনী! পরে জানা যাবে। মূল কথায় আসি। গল্পের শুরু হলো এক ট্রেনের কামরার যাত্রীদের আলাপের মধ্য দিয়ে , তাদের আলাপের বিষয় বস্তু ছিলো "বিবাহ বিচ্ছেদের" মতো জঘন্য বিষয়টা নিয়ে। কথা হচ্ছিলো ভিন্নরকম। যেমন, কারো মতে বিয়ের আগে ভালোবাসা আছে কিনা এটা বুঝেই বিয়ের মতো এতো বড় ব্যপারটায় জড়ানো উচিৎ। আলোচনায় এক বৃদ্ধ বলল, মেয়েরা লেখাপড়া শিখছে বলেই দিন দিন এরকম বন্য ও পুরুষের মুখের উপর কথা বলে দেয়। কিছু হতেই পুরুষকে ঠোক্কা দিয়ে অন্য পুরুষের হাত ধরে। তার ফলশ্রুতিতে ইউরোপে এখন বিবাহ বিচ্ছেদ এর প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু এক মহিলার উক্তি, যাকে ভালবাসিনা তার সাথে থাকব কি করে! মানুষ তো আর জন্তু জানোয়ার নয়। একটার সাথে অন্যটার জুড়ে দিলেই হলো না। কথা উঠেছে নারী অধিকার নিয়ে। বৃদ্ধের মতে, প্রথম থেকেই নারীকে যা খুশি তা করতে দেওয়া উচিৎ নয়। তার মতে, মাঠে ঘোড়া আর ঘরে জরুকে বিশ্বাস নেই। এসবের ভিড়ে মহিলার উক্তি, "ভালবাসা না থাকলে বিয়ে, বিয়ে নয়। বিয়ে পুত হয় ভালবাসার জোরে, ভালোবাসায় পুত বিয়ে হলো সত্যিকারের বিয়ে।"
কিন্তু কথা হলো ভালোবাসাটা কি? যেটা বিয়েকে পুত করে সেই ভালোবাসাটা আসলে কি?
তাছাড়া সে যে আমাকে সত্যিকারে ভালবাসে তা আমি বুঝব কি করে? যদি ধরা হয়, ভালবাসা হলো এমন একটা টান, যা শুধু মাত্র একজনের জন্য হয়। আর এই টানের জন্য অন্য সকল কে ছেড়ে থাকা সম্ভব হয়। বা অন্য যে কোন মানুষের থেকে মোহ উঠে যায়। তবে সে টান টা কতদিন স্থায়ী হতে পারে?
অনেক দিন স্থায়ী হতে পারে। মাঝে মাঝে তা সারাজীবনও হতে পারে। তবে তা কি আসলেই বাস্তবে সম্ভব হয়! সম্ভব নয়। এক গাড়ি মটর বোঝাই করা হয়েছে। সেখানে আগে থেকে একত্র করে মটর দানা যে, সব সময় পাশাপাশি পড়াটা সম্ভব নয় তেমনি। তা ছাড়া অতি তৃপ্তিতে অরুচি ধরারও একটা ব্যপার আছে। একজন কাউকে, ছেলে হোক, মেয়ে হোক জীবনভর ভালবাসা! তারচেয়ে এটা বলা যায় কোন একটা মোমবাতি আপনার জীবনভর আলো দিয়ে যাবে।
বিয়ের মূলে যে প্রেম, তা আসলে কি? সে প্রেম দৈহিক প্রেম ছাড়া অন্য কিছু আছে কিনা সন্দেহ! আজ কাল বিয়ে মানে প্রবঞ্চনা! সতীপনার ভান করে স্বামী স্ত্রী কে ঠকায়। বিয়েটা যখন গায়ে পড়ে চলে আসে, তখন মুখ বুঝে সহ্য করে । একসময় একে অন্যের প্রতি বিরক্ত হয় এমন কি চায় ছাড়াছাড়ি হোক । তবুও যখন একসাথে থাকে, তখনি লোকে মদ ধরে দুঃখ ভুলে থাকার জন্য। আত্মহত্যা করে, নয় একে অপরকে হত্যা করে।
গল্পের ব্যক্তিটি একজন জমিদার। বিয়ে করেছেন। তার পাঁচ খানা সন্তান আছে। বিয়ে ব্যপারটা তার কাছে ভয়াবহ!আর সে ভয়াবহ ব্যাপার থেকে উঠে এসেছে এই গল্পের ভাবধারা। এই ব্যক্তির ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা এই গল্পের প্লট। যেখানে লেখক তার দার্শনিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
এবার আসি মন্তব্যে , গল্পের সুর ছিলো এটাই বিয়ে মানেই প্রেম নয়। প্রেম ছাড়াই অনেক সংসার দুপে দুপে এগিয়ে যায়। বরং বিয়েতে প্রেম মুখ্য নয়। মুখ্য হলো প্রচলিত যে নিয়ম যার মাধ্যমে বংশরক্ষা ও সংসার প্রতিপালন। যতোই আলোচনায় উঠে আসে প্রেম, ঠিক ততটাই হয়ে উঠে সম্পর্কের নোংরা দিকের উম্মেচন।
মঙ্গল মমতা ও প্রেম যদি মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হয়, শাস্ত্রীয় ভবিষ্যদ্ববাণীতে যা বলা হয়েছে, মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য যদি তাই হয়, অর্থাৎ প্রেমে মানুষ এক হবে, হাতিয়ার থেকে বানাতে হবে লাঙল ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলেও সে উদ্দেশ্য লাভের পথে অন্তরায় হলো মানুষের নানা রিপু। তার মধ্যে সব থেকে প্রখর রিপু হলো যৌন প্রেম, দৈহিক প্রেম। আর যদি রিপু দমন করা যায় তাহলে ভবিষ্যদ্বানী গুলি সফল হবে, মানুষ এক হবে, সাধিত হবে তার জীবনের উদ্দেশ্য তখন প্রাণধারনের আর কোন কারণ থাকবে না । যতদিন মানুষের অস্তিত্ব ততদিন তাকে অনুপ্রানিত করবে এই আদর্শ।
লেখক সব শেষে একটা কঠিন সত্য বুঝিয়েছেন, বিয়ে হলো সমাজের একটা নিয়ম যেখানে শুধু কর্তব্য হয়েছে সন্তান জন্মদান ও বংশরক্ষা করা। বিয়ের মূলে রয়েছে, সমাজ টিকিয়ে রাখতে মানব সম্প্রদায়ের বিশাল অবদান।যেখানে প্রেম থাকলেও থাকতে পারে।তবে তা মুখ্য নয়। বিয়ে মানে আবহমান কাল ধরে মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষা ও সংসার প্রতিপালন মুখ্য।
লেখক-ল্যভ তলস্তয়
অনুবাদ-সমর সেন
পৃষ্ঠা-১৯৫
ল্যেভ তলস্তয় হলেন কালজয়ী রুশ ঔপন্যাসিক।শুধু মাত্র রুশ নয়, তাকে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক বলা হয়। তিনি দুইটি অনবদ্য উপন্যাস "যুদ্ধ ও শান্তি"এবং "আন্না কারেনিনা" এর রচয়িতা।ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন এক স্বচ্ছতার প্রতিলিপি। তিনি ধর্মীয় গোঁয়ার্তুমির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। প্রমাণ নিরীক্ষে তিনি সমাজের অন্ধ ধর্মীয় অনুশাসন মানতে বাধ্য হন নি কখনো। পাদ্রী- পুরোহিতদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে, শাস্তিস্বরূপ খ্রিস্টধর্ম থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি তার প্রতি উত্তরে বলেন, "যারা ঈশ্বর ও যীশুকে নিয়ে ব্যবসা করে, আমি তাদের চেয়ে সহস্রগুণ বেশি ধার্মিক খ্রিস্টান। তার মৃত্যুর সময়ও বহু পাদ্রী এসে ভিড় করলেও, দেশ ও বিদেশের হাজারো শোকার্ত মানুষ কোনরূপ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়াই তার শবযাত্রায় শামিল হয়ে তাকে সমাহিত করে। স্বৈরাচারী সম্রাটের শাসনে বিরুদ্ধাচারন করে স্বনামে ও বেনামে দেশের ভিতরে ও বাইরে জার শাসনের সমালোচনা করেন। কিন্তু শাসকবর্গ আরো বেশি সমালোচনার মুখে পড়ার ভয়ে তার বিরুদ্ধে কোনরূপ শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিতে পারেন নি। তিনি নীচু জাত থেকে শুরু করে রাজদরবারের লোকের সাথে অবলীলায় মিশে যেতে পেরেছেন। তিনি সততা আর দায়িত্ববোধের সংমিশ্রনে ব্যক্তিত্বের অধিকারী বিস্ময়কর এক উদাহারণ! তিনি ছিলেন ভাবুক টাইপের দার্শনিক। আর তার দর্শনের ফলে, তার রচনার অংশগুলো রূপকথা বা অবাস্তব বা রোমান্টিকতা শূন্য। তিনি তারই চিত্র এঁকেছেন যা তিনি বাস্তবসম্মত ভাবে অবলোকন করেছেন। সেই চিত্র গুলোই তার চোখে দৃশ্যায়িত হয়ে শিল্পের রূপ পেয়েছে। সামাজিক ভাবে, যে কোন রীতিনীতির উর্ধে ছিলেন। আইন শিক্ষা ছেড়ে দিয়ে একমাত্র ভাবুকতা আর দার্শনিকতার জোরেই লেখালেখিতে অগ্রসর হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের মতো তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। সঙ্গীত বিদ্যা ও অংকনেও তার হাত ছিলো। তলস্তয় এর রচনার পরিমান বিশাল। তার সকল রচনা মিলে ৯০ খন্ডে বিভক্ত।
সাহিত্যে তার প্রবেশ "শৈশব"নামক গল্প দিয়ে। তার বড় গল্প গুলোর মধ্যে অন্যতম "ক্রয়টজার সোনাটা।" কিন্তু এটা প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়। পৃথিবীর নিষিদ্ধ বই গুলোর মধ্যে অন্যতম এই ক্রয়টজার সোনাটা।আগেই বলেছি বাস্তব সম্মত উদাহারন ছাড়া, রূপকথা তলস্তয় এর শিল্পে অনুপস্থিত। তা ছাড়া তার যে কোন লেখার পেছনে থাকে রূঢ় বাস্তবতা। এই গল্পটাও এর বহির্ভূত নয়।
গল্পের কাহিনী প্রতিলিপি হয়েছে এক বৃদ্ধের কাহিনী দিয়ে, কি সেই কাহিনী! পরে জানা যাবে। মূল কথায় আসি। গল্পের শুরু হলো এক ট্রেনের কামরার যাত্রীদের আলাপের মধ্য দিয়ে , তাদের আলাপের বিষয় বস্তু ছিলো "বিবাহ বিচ্ছেদের" মতো জঘন্য বিষয়টা নিয়ে। কথা হচ্ছিলো ভিন্নরকম। যেমন, কারো মতে বিয়ের আগে ভালোবাসা আছে কিনা এটা বুঝেই বিয়ের মতো এতো বড় ব্যপারটায় জড়ানো উচিৎ। আলোচনায় এক বৃদ্ধ বলল, মেয়েরা লেখাপড়া শিখছে বলেই দিন দিন এরকম বন্য ও পুরুষের মুখের উপর কথা বলে দেয়। কিছু হতেই পুরুষকে ঠোক্কা দিয়ে অন্য পুরুষের হাত ধরে। তার ফলশ্রুতিতে ইউরোপে এখন বিবাহ বিচ্ছেদ এর প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু এক মহিলার উক্তি, যাকে ভালবাসিনা তার সাথে থাকব কি করে! মানুষ তো আর জন্তু জানোয়ার নয়। একটার সাথে অন্যটার জুড়ে দিলেই হলো না। কথা উঠেছে নারী অধিকার নিয়ে। বৃদ্ধের মতে, প্রথম থেকেই নারীকে যা খুশি তা করতে দেওয়া উচিৎ নয়। তার মতে, মাঠে ঘোড়া আর ঘরে জরুকে বিশ্বাস নেই। এসবের ভিড়ে মহিলার উক্তি, "ভালবাসা না থাকলে বিয়ে, বিয়ে নয়। বিয়ে পুত হয় ভালবাসার জোরে, ভালোবাসায় পুত বিয়ে হলো সত্যিকারের বিয়ে।"
কিন্তু কথা হলো ভালোবাসাটা কি? যেটা বিয়েকে পুত করে সেই ভালোবাসাটা আসলে কি?
তাছাড়া সে যে আমাকে সত্যিকারে ভালবাসে তা আমি বুঝব কি করে? যদি ধরা হয়, ভালবাসা হলো এমন একটা টান, যা শুধু মাত্র একজনের জন্য হয়। আর এই টানের জন্য অন্য সকল কে ছেড়ে থাকা সম্ভব হয়। বা অন্য যে কোন মানুষের থেকে মোহ উঠে যায়। তবে সে টান টা কতদিন স্থায়ী হতে পারে?
অনেক দিন স্থায়ী হতে পারে। মাঝে মাঝে তা সারাজীবনও হতে পারে। তবে তা কি আসলেই বাস্তবে সম্ভব হয়! সম্ভব নয়। এক গাড়ি মটর বোঝাই করা হয়েছে। সেখানে আগে থেকে একত্র করে মটর দানা যে, সব সময় পাশাপাশি পড়াটা সম্ভব নয় তেমনি। তা ছাড়া অতি তৃপ্তিতে অরুচি ধরারও একটা ব্যপার আছে। একজন কাউকে, ছেলে হোক, মেয়ে হোক জীবনভর ভালবাসা! তারচেয়ে এটা বলা যায় কোন একটা মোমবাতি আপনার জীবনভর আলো দিয়ে যাবে।
বিয়ের মূলে যে প্রেম, তা আসলে কি? সে প্রেম দৈহিক প্রেম ছাড়া অন্য কিছু আছে কিনা সন্দেহ! আজ কাল বিয়ে মানে প্রবঞ্চনা! সতীপনার ভান করে স্বামী স্ত্রী কে ঠকায়। বিয়েটা যখন গায়ে পড়ে চলে আসে, তখন মুখ বুঝে সহ্য করে । একসময় একে অন্যের প্রতি বিরক্ত হয় এমন কি চায় ছাড়াছাড়ি হোক । তবুও যখন একসাথে থাকে, তখনি লোকে মদ ধরে দুঃখ ভুলে থাকার জন্য। আত্মহত্যা করে, নয় একে অপরকে হত্যা করে।
গল্পের ব্যক্তিটি একজন জমিদার। বিয়ে করেছেন। তার পাঁচ খানা সন্তান আছে। বিয়ে ব্যপারটা তার কাছে ভয়াবহ!আর সে ভয়াবহ ব্যাপার থেকে উঠে এসেছে এই গল্পের ভাবধারা। এই ব্যক্তির ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা এই গল্পের প্লট। যেখানে লেখক তার দার্শনিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
এবার আসি মন্তব্যে , গল্পের সুর ছিলো এটাই বিয়ে মানেই প্রেম নয়। প্রেম ছাড়াই অনেক সংসার দুপে দুপে এগিয়ে যায়। বরং বিয়েতে প্রেম মুখ্য নয়। মুখ্য হলো প্রচলিত যে নিয়ম যার মাধ্যমে বংশরক্ষা ও সংসার প্রতিপালন। যতোই আলোচনায় উঠে আসে প্রেম, ঠিক ততটাই হয়ে উঠে সম্পর্কের নোংরা দিকের উম্মেচন।
মঙ্গল মমতা ও প্রেম যদি মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হয়, শাস্ত্রীয় ভবিষ্যদ্ববাণীতে যা বলা হয়েছে, মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য যদি তাই হয়, অর্থাৎ প্রেমে মানুষ এক হবে, হাতিয়ার থেকে বানাতে হবে লাঙল ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলেও সে উদ্দেশ্য লাভের পথে অন্তরায় হলো মানুষের নানা রিপু। তার মধ্যে সব থেকে প্রখর রিপু হলো যৌন প্রেম, দৈহিক প্রেম। আর যদি রিপু দমন করা যায় তাহলে ভবিষ্যদ্বানী গুলি সফল হবে, মানুষ এক হবে, সাধিত হবে তার জীবনের উদ্দেশ্য তখন প্রাণধারনের আর কোন কারণ থাকবে না । যতদিন মানুষের অস্তিত্ব ততদিন তাকে অনুপ্রানিত করবে এই আদর্শ।
লেখক সব শেষে একটা কঠিন সত্য বুঝিয়েছেন, বিয়ে হলো সমাজের একটা নিয়ম যেখানে শুধু কর্তব্য হয়েছে সন্তান জন্মদান ও বংশরক্ষা করা। বিয়ের মূলে রয়েছে, সমাজ টিকিয়ে রাখতে মানব সম্প্রদায়ের বিশাল অবদান।যেখানে প্রেম থাকলেও থাকতে পারে।তবে তা মুখ্য নয়। বিয়ে মানে আবহমান কাল ধরে মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষা ও সংসার প্রতিপালন মুখ্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন