শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

বই-অভিমানী

লেখক-প্রণব ভট্ট
ধরন-উপন্যাস
পৃষ্ঠা-৬৫
মূল্য-৫০
অন্যধারা প্রকাশনী
...
রাত্রি ,  দেখতে অসম্ভব রূপবতী।  সে কোটিপতি  জাকির হোসেন এর মেয়ে। তবে তার বাবা কে  রাত্রি সহ্য করতে পারে না।  রাত্রির বাবা একসময় গরীব ছিলেন।  রাত্রির মাকে বিয়ে করার পর ধারে সংসার চালাতে হতো। কিন্তু একসময় তরতর করে ব্যাবসা বেড়ে উঠতে লাগলো।  সেই সাথে জাকির হোসেন এর মাঝেও চলে এলো বড়লোকি ভাব।  রাত করে ক্লাব, পার্টি, মেয়ে মানুষ আর  মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরা তখন রুটিন হয়ে গেলো।

টাকার পরশে জাকির সাহেব বদলে গেলেও,  বদলালেন না রাত্রির মা।  তিনি সেকেলে বাধ্য রমনী এর মতো  স্বামীভক্ত সতী সাধ্বী স্ত্রী।  তার অবলম্বন হলো চোখের জল। কোন কিছুর বিরুদ্ধে তার কোন অভিযোগ নেই। স্বামীভক্তির  মূল্য হিসেবে তিনি পেতে থাকলেন অবহেলা আর অবজ্ঞা। রাত্রি ছোট বেলা থেকে এসব দেখতে দেখতে বড় হয়েছে। বাবা কে দেখে পুরুষ মানুষের ছায়া টাকেও সে ঘৃণা করতে শিখে গেছে।

জাকির সাহেব নিজের ব্যবসার কথা চিন্তা করে,  কম্পানির এ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার শাকিল আহমেদ এর সাথে রাত্রির বিয়ে ঠিক করে। কিন্তু রাত্রি রাজি হয় না। রাতের অন্ধকারে
সে বাড়ি ছেড়ে পালায়। সে চলে যায় কক্সবাজার। সৈকতে বসে থাকতে থাকতে কখন যে সন্ধ্যা হয়, নিজেও বুঝতে পারে না। হঠাৎ এক বৃদ্ধর চিৎকারে চমকে তাকায়। বুড়া তাকে  তার হারানো মেয়ে  জরিনা মনে করে বাড়ি নিয়ে যায়। আর তখন থেকেই রাত্রির জীবন পাল্টে যায়। সেই সাথে উপন্যাসেরও মোড় বদলে যায়। পাঠক পরিচিত হয় নতুন এক কাহিনীর সাথে।

উপন্যাস টা ভালোবাসার।  একেবারে নির্ভেজাল ভালবাসায় সিক্ত পুরো টা উপন্যাস।  সমস্ত গল্পে লেখক রাত্রি চরিত্রটাকেই ফোকাস করেছেন। পুরুষ কে সে ঘৃনা করে ঠিকই, কিন্তু সে তার স্বপ্ন পুরুষ কে আড়াল করতে পারে না।  ঠিক কিভাবে কি উপায়ে তার জীবনে জোয়ার এর মতো ভালবাসায় সমস্ত যন্ত্রনা মুছে গিয়েছিলো তা না হয় গল্পেই খুজুন। কিভাবে তাকে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে নিয়েছিল আষ্টেপৃষ্টে। পুরুষ বিমুখ মেয়েটাই,  সমস্ত জীবনের অবলম্বন করেছিল একটা পুরুষ।

কোটিপতি বাবার মেয়ে হয়েও,  জেলে পরিবারে খুব সহজেই মিশে গিয়েছিলো রাত্রি।  কিন্তু তাই বলে কি তার স্বপ্ন পুরুষ জেলে..?  এমন টা ভাবলে ভুল করবেন।  মোটেই তা নয়। গল্পের মোড় গুলো আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। সচরাচর ম্যারম্যারা টাইপ ভালবাসার উপন্যাস গুলো খুব বোর লাগে। কিন্তু এই  উপন্যাস টা অসাধারন।  এবং লেখক গল্পের প্লট টা যেভাবে সাজিয়েছেন তা একেবারে অন্যরকম।  এ ছাড়া ভালবাসায় সিক্ত গল্প গুলোতে একটু তো যন্ত্রনার আচড় থাকবেই।  সে যন্ত্রনা টা পাঠক কে তো মেনে নিতে হবে।

বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক প্রণব ভট্ট।  তাঁর আবির্ভাব ৯০ এর দশকে ।টেলিভিশনের জন্য তিনি ধারাবাহিক নাটক লিখতেন। চাকরী সুত্র কাস্টমস ওইক্সাইজ বিভাগে কর্মরত ছিলেন।  ২০০৭  তাঁর অকাল মৃত্যু হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন