লেখক-ইয়াসির মনন
ধরন-উপন্যাস
পৃষ্ঠা-৮০
মূল্য-২৮০
প্রকাশনা-পাললিক সৌরভ
প্রচ্ছদ-কাব্য করিম
প্রথম প্রকাশ-২০১৬
....
প্রতিটা শিশু জন্মের পর একটা সুস্থ পরিবেশ দাবী করে। যেখানে সে ভালো থাকবে, এমনকি পরবর্তী জীবনের সকল কঠিন মুহূর্ত গুলোর সাপোর্ট সে তার পরিবার থেকেই পাবে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন একজন আদর্শ বাবা ও মায়ের। যারা তার শৈশবটাকে সম্পূর্ণ প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করেন। সন্তানের জীবনে একমাত্র আশ্রয়স্থল হয় তার বাবা-মা। যতোটা প্রয়োজন থাকে তার মায়ের, ঠিক ততটাই থাকে তার বাবার। সেখানে কোন সন্তান যদি জন্মের পরেই এই দুজনের থেকে একজনকেও হারিয়ে ফেলে, তবে তার মতো অসহায় এর উদাহারন আর কিছু হয় না! কথা হলো আধুনিক জগতের বিবাহ-বিচ্ছেদ নিয়ে। যার মাধ্যমে বাবা-মা আলাদা বসবাস শুরু করেন। শব্দ হিসেবে ডিভোর্স বা সেপারেশন আমাদের খুব পরিচিত। অথচ এই শব্দটা কত মর্মান্তিক তা শুধু জানে, ঠিক ওই অবস্থানে থাকা মা-বাবার সন্তান গুলো!
বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন। এর মাঝেই পরিবারের সৃষ্টি হয়। আধুনিক সমাজে সবাই নিজেদের মত-অধিকার নিয়ে খুব বেশি সচেতন। আর তাই দেখতে পাওয়া যায় বিয়ের পর কোন পক্ষই নিজেদের ভালো লাগা বা মন্দ লাগা কে উপেক্ষা করে সঙ্গীর ইচ্ছাকে কোন মূল্যায়ন করেন না। কখনো এক পক্ষ কখনো বা দুই পক্ষই দোষী থাকেন। অথচ তাদের দোষে ভুক্তভোগী হন, তাদের সন্তানরা। যারা নিজেদের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসে নি। তাদের দুজনের ইচ্ছাতেই তার আগমন হয়েছে। তার অধিকার আছে একটা সুস্থ পরিবারে বড় হবার। সমাজের অন্য সুখী পরিবারের অন্য আট দশটা বাচ্চার মতো তাদের প্রাপ্তি, তাদের মা বাবাও একসাথে থাকবেন। যে কোন প্রয়োজনে তাদের সে কাছে পাবে। সে বড় হবে দুজনের ভালোবাসায়, দুজনের আশ্রয়ে। কিন্তু বাস্তবে ফিরে তাকালে দৃশ্যায়িত হয় অন্য ছবি। এখানে একটা আধুনিক উচ্চমানের শব্দ আছে তা হলো "ডিভোর্স"! আর এতে ছিটকে আলাদা হয়ে যায় একজন মা ও বাবা। মধ্যস্থলে পিলারের মতো অসহায় হয়ে থাকে তাদের সন্তান। সে না পারে বাবার কাছে যেতে, না পারে মায়ের কাছে থাকতে। এই অবস্থায় বাচ্চাটা বাবা এবং দাদু বাড়ির সবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। কেন না বাস্তব খুব করুণ! হয়তো দাদা বা দাদু তাদের নাতি নাতনীদের দিকে কিছুটা স্নেহের দৃষ্টিতে তাকান। কিন্তু বাবার ভাই বা বোন?
"যার মাথার উপর ছায়া থাকে না, সেখানে রোদ তো লাগবেই"। যেখানে পিতা হয়ে সন্তানের দেখভাল এর দায়িত্ব নেন না, সেখানে চাচা বা ফুফুরা থাকেন, "ফোঁড়ার উপর খড়ার ঘা" এর মতো। তারা এটা একবারও ভাবে না, অবিভাবক ছাড়া সন্তানের কি রূপ হেনস্তায় পড়তে হয়! নিজেই তো সুখে আছি, অন্যকেউ পারলে থাকুক জাহান্নামে।
এই প্রতিকূল অবস্থার মাঝে বেড়ে উঠা অসহায় সন্তানটার কথা ভাবুন তো! স্বভাবতই, আমাদের দেশে সেপারেশান হলে বাচ্চাটা তার মায়ের কাছে থাকে। হয়তো একটা সময় পর বাবার কাছ থেকে নিজের অধিকার নিতে আসে। সেটা তার পরিনত বয়সে। কিন্তু এই যে অপরিনত বয়স, যেখানে এক পাশে তার বাবা আরেক পাশে তার মাকে দরকার হয় তখন! তখন তো সে একটা পাশ খালি রেখে, অন্য পাশ টা নিয়ে সমাজে ঠিকে থাকার চেষ্টা করে। যদিও মায়ের খুব চেষ্টা থাকে তার সন্তানের যাতে কোনরূপ সমস্যা না হয়। তাই বলে মা কি পারে বাবার অভাববোধটা পুরণ করতে?
পারে না। সম্ভব হয় না। সে তার চলার প্রতিটা পদে পদে তার বাবাকে মিস করে। বন্ধুদের বাবাকে দেখে তার ঈর্ষা হয়! দিন শেষে রাজ্যের অভাব নিয়ে মশারি টানিয়ে দুঃখ গুলো বালিশ চাপা দেয়! পরদিন হাসি মুখে আরো একটা নতুন দিন শুরু করে। কিন্তু এভাবে আর কতোদিন!
একটা সময় অপরিসীম মানসিক অশান্তিতে সে তার জীবনে সব থেকে কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, সবার অগোচরে। কেন না, ছোট বুকের কষ্ট টা ততদিনে ফুলে ফেপে বেশ অনেক খানি বড় হয়ে গেছে! কি যন্ত্রণাময় সময়গুলো তার!
তেমনি একটা গল্প, ইয়াসির মনন এর বইয়ের মলাট বন্ধী। তিনি এর নাম করন করেছেন " তারও প্রশ্নটা কমন পড়েছিল"। সবথেকে অবাক করা ব্যপার হচ্ছে, এই গল্পের শেষ বাক্যাংশ হচ্ছে "প্রশ্ন তারও কমন পড়েছিল"।
গল্পটা এক ব্রোকেন ফ্যামেলির। যার, যাতা কলে পিষ্ট "রিমন" নামের অল্পবয়সী ছেলে। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তার মা শামীমা এবং বাবা আশরাফ সাহেব। অল্প বয়সে বিয়ে করায় শামীমার পড়শোনা হয় নি তেমন। বিয়ের পর স্বামীর সাথে চলে গেয়েছিলেন সৌদি। কিন্তু বড় মেয়ে জন্মের পর এবং রিমনের জন্মের কিছুদিন আগে তিনি স্বামীর সাথে ঝগড়া করে আলাদা হয়ে চলে আসেন দেশে। জানি না কার ভুল ছিলো এই সম্পর্কে। কিন্তু এই ভুলের মাশুল গুনতে হলো বাচ্চা রিমনকে। বাবাকে ছেড়ে থাকতে হতো জন্মের পর থেকে সব সময়। সব থেকে বেশি মিস করতো ঈদের দিন গুলোতে, কেন না তখন সে দেখতো নামাজের পর তার অন্য বন্ধুরা তাদের বাবাদের সাথে কোলাকুলি করছে। আর সে...
এরকম আরো ছিলো, জীবনের প্রতিটা ধাপে ধাপে তাকে এই শূন্যতা ভোগ করতে হয়েছে। কোথায় করতে হয়নি?
বাসায়, স্কুলে, আত্নীয়দের মধ্যে, বন্ধুদের মধ্য, দিনের প্রতিটি কাজে তাকে বহন করতে হয়েছে এই শূন্যতার যন্ত্রণা। যদিও তার মা তাকে আগলে রেখেছে। যদিও তার বোন ও বোন জামাই সাপোর্ট দিয়েছে সব সময়। কিন্তু তাকে সামলাতে হয়েছে অনেক কিছু। বাচ্চা বয়সে অল্প অল্প আবদার গুলোকে কোরবানি করতে হয়েছে বাবা নেই বলে। বাবা নেই বলেই খেলার সময় তার দৌড়াতে হয়েছে বিদ্যুৎ বিল আর গ্যাস বিল দিতে । পরীক্ষার রেজাল্ট আনতে হয়েছে সবার শেষে। কেন না বাবার কাধে চড়ে রেজাল্ট শিটের রেজাল্ট দেখবার মতো ভাগ্য তার ছিলো না। দাঁতের ব্যথা থাকার পরও তা লুকাতে হয়েছে মায়ের থেকে। কেন না বাবা নেই, তাই সংসার খরচটা, মায়ের ঔষুধ আনাটা তার ভাবতে হয়েছে। এত এত প্রতিকূলতা সে কাটিয়েও বাবার কাছে পায়নি সামান্যতম স্নেহ। বাচ্চা রিমন ১০৩ ডিগ্রী জ্বর নিয়ে তার বাবাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে গেছে এটা তার বাবার কাছে কিছুই না। তার থেকে মুখ্য হয়ে গেছে ফেরার সময় গাড়িতে রিমন এর বমি করে দেওয়া। এখানে তার বাবা তাকে অভিযুক্ত করেছেন এই বলে যে, রিমন গাড়িতে চড়ার ম্যানার জানে না। তাকে শুনতে হয়েছে কটুক্তি! তার চাচার, তার ফুফুর, এমনকি কাজিনদেরও। বাবা তার মাকে আলাদা করার সাথে সাথে, তাকেও আলাদা করে দিয়েছে। খোজ নেয়নি এই পিচ্চি রিমনের। যেখানে রিমনের কোন দোষ ছিলো না। আর যখন রিমন তার অধিকার নিয়ে কথা বলল, তখন সে পরিচিতি পেল "ঠোঁটকাটা" বলে। কেমন চলে ঠোঁটকাটা রিমনের দিন গুলো! বইটা পড়েই জানুন।
গল্পে আরো একটা চরিত্র হলো অনন্যা। রিমনের বান্ধবী। রিমনের স্কুল আর কলেজ লাইফ নিয়ে বইয়ের মূল অংশ। লেখকের প্রথম বই এটা। তবে সে তুলনায় তেমন এলোমেলো নয় মোটেও। লেখার ধীরগতিতে মনে হয়েছিলো, আমি রিমনের ডায়েরি পড়ছি। লেখার প্লট টা ছিলো অসাধারণ! যে কারনে লেখকের সমালোচনা করতে সাহস পাচ্ছি না। ছোট একটা বই, যার প্রতিটা পৃষ্ঠা যন্ত্রণার। বই টা আমাকে কষ্ট দিয়েছে খুব! পড়ার সময় আমার মনে হয়েছে ১১ বছরের নুহাশের কথার।এমনি পরিচিত আরো এক বন্ধুর কথা।
লেখক বুঝাতে চেয়েছেন,বাবা মায়েরা নিজেদের শান্তির জন্য সন্তানের উপর অবিচার করেন। যার পূর্ণ দোষ নিজেদের। বলি হয় নিরপরাধ সন্তান গুলো!অথচ একটু খানি সেক্রিফাইস মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে,একটা অসহায় বাচ্চার ভবিষৎ।
লেখক হিসেবে তিনি নতুন। তবে প্রথম গল্পে এমন একটা প্লট! লেখকের দূরদর্শিতার প্রমাণ করে। যদিও এ গল্পে পাঠকের কিছু অভিযোগ থাকতে পারে। আশা করি এরপর আরো লেখা পাবো যেগুলোতে, পাঠকের কোন অভিযোগ থাকবে না। বইয়ের প্রচ্ছদ বেশ পছন্দ হয়েছে, বিশেষ করে রঙ! তবে কিনতে গেলে দামটা বেশ চড়া মনে হবে। লেখক এটা একটু ভেবে দেখার অনুরোধ করা হল।
ধরন-উপন্যাস
পৃষ্ঠা-৮০
মূল্য-২৮০
প্রকাশনা-পাললিক সৌরভ
প্রচ্ছদ-কাব্য করিম
প্রথম প্রকাশ-২০১৬
....
প্রতিটা শিশু জন্মের পর একটা সুস্থ পরিবেশ দাবী করে। যেখানে সে ভালো থাকবে, এমনকি পরবর্তী জীবনের সকল কঠিন মুহূর্ত গুলোর সাপোর্ট সে তার পরিবার থেকেই পাবে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন একজন আদর্শ বাবা ও মায়ের। যারা তার শৈশবটাকে সম্পূর্ণ প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করেন। সন্তানের জীবনে একমাত্র আশ্রয়স্থল হয় তার বাবা-মা। যতোটা প্রয়োজন থাকে তার মায়ের, ঠিক ততটাই থাকে তার বাবার। সেখানে কোন সন্তান যদি জন্মের পরেই এই দুজনের থেকে একজনকেও হারিয়ে ফেলে, তবে তার মতো অসহায় এর উদাহারন আর কিছু হয় না! কথা হলো আধুনিক জগতের বিবাহ-বিচ্ছেদ নিয়ে। যার মাধ্যমে বাবা-মা আলাদা বসবাস শুরু করেন। শব্দ হিসেবে ডিভোর্স বা সেপারেশন আমাদের খুব পরিচিত। অথচ এই শব্দটা কত মর্মান্তিক তা শুধু জানে, ঠিক ওই অবস্থানে থাকা মা-বাবার সন্তান গুলো!
বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন। এর মাঝেই পরিবারের সৃষ্টি হয়। আধুনিক সমাজে সবাই নিজেদের মত-অধিকার নিয়ে খুব বেশি সচেতন। আর তাই দেখতে পাওয়া যায় বিয়ের পর কোন পক্ষই নিজেদের ভালো লাগা বা মন্দ লাগা কে উপেক্ষা করে সঙ্গীর ইচ্ছাকে কোন মূল্যায়ন করেন না। কখনো এক পক্ষ কখনো বা দুই পক্ষই দোষী থাকেন। অথচ তাদের দোষে ভুক্তভোগী হন, তাদের সন্তানরা। যারা নিজেদের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসে নি। তাদের দুজনের ইচ্ছাতেই তার আগমন হয়েছে। তার অধিকার আছে একটা সুস্থ পরিবারে বড় হবার। সমাজের অন্য সুখী পরিবারের অন্য আট দশটা বাচ্চার মতো তাদের প্রাপ্তি, তাদের মা বাবাও একসাথে থাকবেন। যে কোন প্রয়োজনে তাদের সে কাছে পাবে। সে বড় হবে দুজনের ভালোবাসায়, দুজনের আশ্রয়ে। কিন্তু বাস্তবে ফিরে তাকালে দৃশ্যায়িত হয় অন্য ছবি। এখানে একটা আধুনিক উচ্চমানের শব্দ আছে তা হলো "ডিভোর্স"! আর এতে ছিটকে আলাদা হয়ে যায় একজন মা ও বাবা। মধ্যস্থলে পিলারের মতো অসহায় হয়ে থাকে তাদের সন্তান। সে না পারে বাবার কাছে যেতে, না পারে মায়ের কাছে থাকতে। এই অবস্থায় বাচ্চাটা বাবা এবং দাদু বাড়ির সবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। কেন না বাস্তব খুব করুণ! হয়তো দাদা বা দাদু তাদের নাতি নাতনীদের দিকে কিছুটা স্নেহের দৃষ্টিতে তাকান। কিন্তু বাবার ভাই বা বোন?
"যার মাথার উপর ছায়া থাকে না, সেখানে রোদ তো লাগবেই"। যেখানে পিতা হয়ে সন্তানের দেখভাল এর দায়িত্ব নেন না, সেখানে চাচা বা ফুফুরা থাকেন, "ফোঁড়ার উপর খড়ার ঘা" এর মতো। তারা এটা একবারও ভাবে না, অবিভাবক ছাড়া সন্তানের কি রূপ হেনস্তায় পড়তে হয়! নিজেই তো সুখে আছি, অন্যকেউ পারলে থাকুক জাহান্নামে।
এই প্রতিকূল অবস্থার মাঝে বেড়ে উঠা অসহায় সন্তানটার কথা ভাবুন তো! স্বভাবতই, আমাদের দেশে সেপারেশান হলে বাচ্চাটা তার মায়ের কাছে থাকে। হয়তো একটা সময় পর বাবার কাছ থেকে নিজের অধিকার নিতে আসে। সেটা তার পরিনত বয়সে। কিন্তু এই যে অপরিনত বয়স, যেখানে এক পাশে তার বাবা আরেক পাশে তার মাকে দরকার হয় তখন! তখন তো সে একটা পাশ খালি রেখে, অন্য পাশ টা নিয়ে সমাজে ঠিকে থাকার চেষ্টা করে। যদিও মায়ের খুব চেষ্টা থাকে তার সন্তানের যাতে কোনরূপ সমস্যা না হয়। তাই বলে মা কি পারে বাবার অভাববোধটা পুরণ করতে?
পারে না। সম্ভব হয় না। সে তার চলার প্রতিটা পদে পদে তার বাবাকে মিস করে। বন্ধুদের বাবাকে দেখে তার ঈর্ষা হয়! দিন শেষে রাজ্যের অভাব নিয়ে মশারি টানিয়ে দুঃখ গুলো বালিশ চাপা দেয়! পরদিন হাসি মুখে আরো একটা নতুন দিন শুরু করে। কিন্তু এভাবে আর কতোদিন!
একটা সময় অপরিসীম মানসিক অশান্তিতে সে তার জীবনে সব থেকে কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, সবার অগোচরে। কেন না, ছোট বুকের কষ্ট টা ততদিনে ফুলে ফেপে বেশ অনেক খানি বড় হয়ে গেছে! কি যন্ত্রণাময় সময়গুলো তার!
তেমনি একটা গল্প, ইয়াসির মনন এর বইয়ের মলাট বন্ধী। তিনি এর নাম করন করেছেন " তারও প্রশ্নটা কমন পড়েছিল"। সবথেকে অবাক করা ব্যপার হচ্ছে, এই গল্পের শেষ বাক্যাংশ হচ্ছে "প্রশ্ন তারও কমন পড়েছিল"।
গল্পটা এক ব্রোকেন ফ্যামেলির। যার, যাতা কলে পিষ্ট "রিমন" নামের অল্পবয়সী ছেলে। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তার মা শামীমা এবং বাবা আশরাফ সাহেব। অল্প বয়সে বিয়ে করায় শামীমার পড়শোনা হয় নি তেমন। বিয়ের পর স্বামীর সাথে চলে গেয়েছিলেন সৌদি। কিন্তু বড় মেয়ে জন্মের পর এবং রিমনের জন্মের কিছুদিন আগে তিনি স্বামীর সাথে ঝগড়া করে আলাদা হয়ে চলে আসেন দেশে। জানি না কার ভুল ছিলো এই সম্পর্কে। কিন্তু এই ভুলের মাশুল গুনতে হলো বাচ্চা রিমনকে। বাবাকে ছেড়ে থাকতে হতো জন্মের পর থেকে সব সময়। সব থেকে বেশি মিস করতো ঈদের দিন গুলোতে, কেন না তখন সে দেখতো নামাজের পর তার অন্য বন্ধুরা তাদের বাবাদের সাথে কোলাকুলি করছে। আর সে...
এরকম আরো ছিলো, জীবনের প্রতিটা ধাপে ধাপে তাকে এই শূন্যতা ভোগ করতে হয়েছে। কোথায় করতে হয়নি?
বাসায়, স্কুলে, আত্নীয়দের মধ্যে, বন্ধুদের মধ্য, দিনের প্রতিটি কাজে তাকে বহন করতে হয়েছে এই শূন্যতার যন্ত্রণা। যদিও তার মা তাকে আগলে রেখেছে। যদিও তার বোন ও বোন জামাই সাপোর্ট দিয়েছে সব সময়। কিন্তু তাকে সামলাতে হয়েছে অনেক কিছু। বাচ্চা বয়সে অল্প অল্প আবদার গুলোকে কোরবানি করতে হয়েছে বাবা নেই বলে। বাবা নেই বলেই খেলার সময় তার দৌড়াতে হয়েছে বিদ্যুৎ বিল আর গ্যাস বিল দিতে । পরীক্ষার রেজাল্ট আনতে হয়েছে সবার শেষে। কেন না বাবার কাধে চড়ে রেজাল্ট শিটের রেজাল্ট দেখবার মতো ভাগ্য তার ছিলো না। দাঁতের ব্যথা থাকার পরও তা লুকাতে হয়েছে মায়ের থেকে। কেন না বাবা নেই, তাই সংসার খরচটা, মায়ের ঔষুধ আনাটা তার ভাবতে হয়েছে। এত এত প্রতিকূলতা সে কাটিয়েও বাবার কাছে পায়নি সামান্যতম স্নেহ। বাচ্চা রিমন ১০৩ ডিগ্রী জ্বর নিয়ে তার বাবাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে গেছে এটা তার বাবার কাছে কিছুই না। তার থেকে মুখ্য হয়ে গেছে ফেরার সময় গাড়িতে রিমন এর বমি করে দেওয়া। এখানে তার বাবা তাকে অভিযুক্ত করেছেন এই বলে যে, রিমন গাড়িতে চড়ার ম্যানার জানে না। তাকে শুনতে হয়েছে কটুক্তি! তার চাচার, তার ফুফুর, এমনকি কাজিনদেরও। বাবা তার মাকে আলাদা করার সাথে সাথে, তাকেও আলাদা করে দিয়েছে। খোজ নেয়নি এই পিচ্চি রিমনের। যেখানে রিমনের কোন দোষ ছিলো না। আর যখন রিমন তার অধিকার নিয়ে কথা বলল, তখন সে পরিচিতি পেল "ঠোঁটকাটা" বলে। কেমন চলে ঠোঁটকাটা রিমনের দিন গুলো! বইটা পড়েই জানুন।
গল্পে আরো একটা চরিত্র হলো অনন্যা। রিমনের বান্ধবী। রিমনের স্কুল আর কলেজ লাইফ নিয়ে বইয়ের মূল অংশ। লেখকের প্রথম বই এটা। তবে সে তুলনায় তেমন এলোমেলো নয় মোটেও। লেখার ধীরগতিতে মনে হয়েছিলো, আমি রিমনের ডায়েরি পড়ছি। লেখার প্লট টা ছিলো অসাধারণ! যে কারনে লেখকের সমালোচনা করতে সাহস পাচ্ছি না। ছোট একটা বই, যার প্রতিটা পৃষ্ঠা যন্ত্রণার। বই টা আমাকে কষ্ট দিয়েছে খুব! পড়ার সময় আমার মনে হয়েছে ১১ বছরের নুহাশের কথার।এমনি পরিচিত আরো এক বন্ধুর কথা।
লেখক বুঝাতে চেয়েছেন,বাবা মায়েরা নিজেদের শান্তির জন্য সন্তানের উপর অবিচার করেন। যার পূর্ণ দোষ নিজেদের। বলি হয় নিরপরাধ সন্তান গুলো!অথচ একটু খানি সেক্রিফাইস মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে,একটা অসহায় বাচ্চার ভবিষৎ।
লেখক হিসেবে তিনি নতুন। তবে প্রথম গল্পে এমন একটা প্লট! লেখকের দূরদর্শিতার প্রমাণ করে। যদিও এ গল্পে পাঠকের কিছু অভিযোগ থাকতে পারে। আশা করি এরপর আরো লেখা পাবো যেগুলোতে, পাঠকের কোন অভিযোগ থাকবে না। বইয়ের প্রচ্ছদ বেশ পছন্দ হয়েছে, বিশেষ করে রঙ! তবে কিনতে গেলে দামটা বেশ চড়া মনে হবে। লেখক এটা একটু ভেবে দেখার অনুরোধ করা হল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন