বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭

বই-অাশ্চর্য জীবন

লেখক-আহসান হাবীব
ধরন-উপন্যাস
পৃষ্ঠা-৭০
মূল্য-১০০
সৃজনি প্রকাশনী।
হাসান চাকরি করে ঢাকায়। এক গার্মেন্টসের সুপারভাইজার। পাঁচ হাজার টাকা বেতন। এত অল্প টাকায় তার বেশ কষ্ট করেই চলতে হয়। দু হাজার তার নিজের খরচ লেগে যায়। বাকি তিন হাজার বাড়িতে পাঠায়। ভাই বোনের পড়ার খরচ সংসার এর খরচও তার চালাতে হয়।
মাসে একবার বাড়িতে আসে সে । আসার সময় বাড়ির জন্য টুকটাক কিছু নিয়ে আসে। নিজেকে তখন তার বিদেশ ফেরত মনে হয়। এরকম করেই ফিরছিল হাসান। ট্রেন লেট করে আসায় বেশ রাত হয় তার। বাড়ি যাওয়ার পথে ফিরতে দেখা হয় বাল্য বন্ধু ছদরুল এর সাথে। বাড়ি যাওয়ার জন্য ছদরুল একটা গরুর গাড়ি ঠিক করে দেয় তাকে। তবে একটু সমস্যা আছে, তা হল গাড়িতে একটা লাশ আছে । হাসান যেতে চায় নি। তখন ছদরুল তাকে বুঝিয়ে দেয়, এক স্ত্রী লোক তার মৃত স্বামী কে নিয়ে একা যেতে ভয় পাচ্ছে। সে গেলে তাদের উপকার হয়। সাত পাঁচ ভেবে হাসান রাজি হয়।
তিন বান্ধবী, বিবাহিত। সংসার নিয়ে তার বেশ সুখে আছে। তবে কখনো তাদের মধ্যে কারো মন হঠাৎ খারাপ হলে , তারা একসাথে বেড়িয়ে পড়ে। আজ মন খারাপ হলো মিনুর। সে তার স্বামীর সাথে ঝগড়া করেছে। এবার যাবে তারা বন্দরবন।
টানা বারো ঘন্টার জার্নি করে কুটিয়াচুরি বাংলোতে পৌছাল। বাংলো টা দেখে তিনজনেই উচ্ছ্বাসিত। হঠাৎ যে কোন কিছু দেখেই তিনজন বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে উঠছে, ওয়াও বলে।
মুহিব চুপচাপ বসে ভাবছে। তার জীবন টা পুরো অর্থহীন মনে হচ্ছে নিজের কাছে। মলি তার জীবনে থাকতে চাচ্ছে না। ঘটনা তেমন খুব কিছু না। কিন্তু সম্পর্ক কি এতো সহজে ভেঙে যায়! কিন্তু ভেঙ্গে গেল। মন খারাপ সাড়াতেই রাত দশটায় মুহিব আর মিলন রওয়ানা দিল। গন্তব্য তাদের বান্দরবন। সেখানে যাওয়ার বেশ একটা কারণ আছে। তা হলো তারা যাচ্ছে একটা প্রজেক্টে । একটা ডকুমেন্টারি স্যুটিংয়ে। পাঁচ থেকে সাত দিনের কাজ। ক্যাশ পাবে বিশ হাজার। সেখানে গিয়ে দলের লিডার এর সাথে তাদের কথা হলো, নাম জোয়ার্দার। মুহিব দেখল তাদের মতো আরো অনেকে আছে।
কাজ সম্পর্কে জোয়ার্দার বলল, তারা একটা ডকু ড্রামা করবে। মূলত ভিডিও ফিকশন। অস্র চোরাচালানের উপর। যাস্ট অভিনয় আর কি। ব্যাপারটা এমন হবে যে সরকারের লোক লেগেছে পিছে, তাড়া করছে আর মুহিব রা অস্রের বোঝা নিয়ে পালাচ্ছে। কিন্তু আসলেই কি বাস্তবিক তারা কোন অভিনয়ে পা বাড়াল নাকি অন্য কিছু!
এরকম তিনটা আলাদা আলাদা গল্প নিয়ে আশ্চর্য জীবন। কাহিনীর আবর্তে হাসান, মুহিব, মনির আর তিন বান্ধবী শামীমা , সানজিদা, মিনু। একত্র হয়ে গেলো। ১,২,৩ এই তিনটি দলের মানুষকে একত্র করে দিলো নিয়তি। কিভাবে বা কেন সে অনেক বড় ইতিহাস।
মানুষ বেঁচে থাকে স্বপ্ন দেখবে বলে। আর স্বপ্ন দেখে বাঁচবার জন্য। মৃত্যুর মুখোমুখী মানুষ ভাবে যদি আরো একবার জীবনটা পাওয়া যেত। আর সেই ব্যাকুল ইচ্ছাটা বেঁচে থাকতে বেশ পানসে লাগে। মনে হয় কি দরকার বেঁচে থাকার। মরে গেলেই বোধহয় ভালো হতো। আশ্চর্য মানুষ! তার ভাবনাচিন্তা গুলোও তেমন। তাই জীবনটাও তাই আশ্চার্য!
মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসার গল্প গুলো। লেখক এর ভাষ্য মতে, গল্পের আড়ালে তিনি একটা ম্যাসেজ দিয়েছেন। সেটা কি? খোঁজে বের করতে হবে পাঠককেই।
আহসান হাবীব এর অন্যতম উপন্যাস হলো আশ্চর্য জীবন। যেখানে জীবনের ভাবার্থ আছে। যেখানে মানে খুজার থেকে, প্রবলভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্নের তীব্রতা পাওয়া যায়। আহসান হাবীব একজন রম্যলেখক এবং কার্টুনিস্ট। তার আরও একটা পরিচয় আছে। তিনি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও মোহাম্মদ জাফর ইকবাল এর কনিষ্ঠ ভ্রাতা। এবং উম্মাদ এর সম্পাদক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন