শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

বই-তিন গোয়েন্দা ভলিউম-০৬

লেখক-রকিব হাসান
ধরন-কিশোর থ্রিলার
পৃষ্ঠা-২০৮
মূল্য-৭৪
সেবা প্রকাশনী
....
"হ্যালো, কিশোর বন্ধুরা -
আমি কিশোর পাশা বলছি,  আমেরিকার রকি বীচ থেকে।"
আমি জানি না, বই পোকার মধ্যে কেউ এই  ডাকের সাথে অপরিচিত কিনা ।  কিন্তু এটা বলতেই হবে,  আমাকে একজন বই পোকা বানাতে এই ডাকটাই বাধ্য করেছিলো।

পিছনে তাকালে বুঝতে পারি, এই বইগুলোর জন্য আম্মুর হাতের মাইর যে কি পরিমান খাইতে হইছে আমাকে। এক সময় কালেকশানে তিন গোয়েন্দার ৯৬ টা ভলিউম ছিলো। তবে সময়ে আম্মু আমার অনেক বই জ্বালিয়ে দিয়েছেন। তার মধ্যে বেশির ভাগ তিনগোয়েন্দা ই ছিলো।  যাক সে সব কথা।  আমার পছন্দের কিছু ভলিউম এখনো যক্ষের ধনের মত আগলে রেখেছি। যদিও আমার আকর্ষন টা আগের মতো এখন আর তারা ধরে রাখতে পারে না। তবুও মায়া বলে একটা কথা আছে।  এটা পুরোপুরি দখল করে রেখেছে এখনো!

তিন গোয়েন্দা ভলিউম -০৬
যে তিনটি গল্পের  সমন্বয়  সেগুলো হলো -
১.মহাবিপদ
মহাবিপদ শুধু যে বিপদ তা কিন্তু নয়।  সত্যিই মহাবিপদ!  গুটি গুটি পায়ে এসে হাজির হয়েছে কিশোর,  মুসা আর রবিন এর দোর গোড়ায়।
কিশোর,  মুসা আর রবিন এর আরেক সঙ্গী হল জিনা।  তাদের সাথে কিশোর এর কুকুর রাফি তো আছেই।  তারা এসেছে,  জিনার বাবার  মিস্টার পারকার এর সাথে। মিস্টার  হ্যারিসন পারকার  এক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন ওয়েস্টইন্ডিজের দ্বীপ মারটিনি তে। আপন ভোলা বদমেজাজী মানুষ টাকে আগলে রাখতে তার স্ত্রী মিসেস পারকার ও এসেছেন।তারা উঠবে  মিস্টার পারকার এর বন্ধু  ডক্টর জারনিম্যান ফেবারের বাড়িতে। উপকূলের কাছে ছোট একটা ফিশিং টাউন। সেখানে ডাক্তার এর বিশাল বাড়ি। তাদের রিসিভ করার জন্য এলো ডক্টর এর ছেলে ডেভিড । কথা আর কুশলবিনিময় এর পর ডেভিড বাড়ির পথ ধরল।  আর জানালো তার বাবা আসতে পারে নি, তিনি ফ্রান্সে গেছেন। কিছুদিন ধরে একটা গোলমাল হচ্ছে।  আর তাহল চোর ঢুকেছিলো  ডক্টর এর স্টাডি রুমে।  গোপন ফর্মুলার  আলমারি টা ভাঙতে চেয়েছিলো।এ খবর শুনে গোয়েন্দা প্রধানের  ধ্যান এসে গেল। কেন না পা দিতে না দিতেই রহস্যের গন্ধ!  নাহ খুব একটা খারাপ যাবে না ছুটি টা।

২.খেপা শয়তান-
এই রহস্য পেয়েছিলো ঝোপের আড়ালে।  কেন কিভাবে তা না হয় নাই বললাম। এখনো যাদের তিনগোয়েন্দায় মোহ আছে তারাই দেখে নিবেন।

৩.রত্নচোর-
গরমের ছুটি, স্কুল বন্ধ। তাই তিন গোয়েন্দা এসে ছিলো জিনাদের বাড়ি।  আর আসার দিনেই ঝড়।  একবারে গোবেল ভিলা -কে এলোমেলো করে দিয়েছে।  বাগানে কাজ করার সময় জিনার মা অফার করলো, তাদের কে দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে।  পর দিন জিনিস পত্র  নৌকা বোঝাই করে তারা রওনা হলো।  তিন গোয়েন্দা আছে আর সেখানে কোন রহস্য নেই তা কি হয় নাকি।  ঠিকই পেয়ে গেলো।  এবং লড়তে হলো ভয়ংকর গ্যাং দের সাথে।

কতোদিন! অনেক দিন পর বইটা খুললাম।  সেই পরিচিত ঘ্রাণ।  যা এক সময় মাতাল করে দিতো।  রহস্যের প্যাচের  মধ্যে ছোট জামির মাথাটাও ঢুকে যেত কিভাবে, টের ই পেতাম না।  আমার লালিত স্বপ্ন,  একদিন অনেক টাকা হলে আমি রকি বীচে যাব।  দেখব আমার সঙ্গীদের।  ভাইয়া কে প্রশ্ন করতাম আমাকে নিয়ে যেতে পারবে কিনা।  এখন বুঝি রকিব হাসান কি তৈরি করেছিলেন  আমাদের জন্য!  বাঙালী কিশোর,  আমেরিকান নিগ্রো মুসা আর আইরিশ আমেরিকান রবিন। তিনটি ছেলে মাথা টাকে ঝেকে রাখতো। স্কুল ব্যাগ ফেলেই টেবিলে বসে যেতাম। এখনো সেই রেশ,  আগের মতোই রহস্য গুলো এখনো আমাকে কিছুর মধ্যে হারাতে বাধ্য করে।এদের সাথে কতো দিনের পরিচয় আমার!  অনেক অনেক অনেক দিন! নাহ এখনো পুরানো হয় নি।  এভাবে আমার ছোটবেলাটাকে  রহস্যের মধ্য ডুবে রাখার জন্য সেবা প্রকাশনী আর রকিব হাসান একটা ধন্যবাদ পেতেই পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন