শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

বই-পারাপার

লেখক-হুমায়ূন আহমেদ
ধরন-উপন্যস
পৃষ্ঠা-৭৫
মূল্য-২০০
অন্যপ্রকাশ
....
পারাপার শুরু হয়েছে ঘুঘুর ডাক কেন্দ্র করে।
মাইক্রোবাসের পর্দা সরিয়ে একটা পান খাওয়া মুখের ভদ্র মহিলা হিমুকে প্রশ্ন করলো,  এই তুই হিমু না?
হিমু কিন্তু তাকে চিনতে পারে নি, তাই চুপ করে রইলো। 

তিনি জোর করে হিমু কে রিকশা থেকে নামিয়ে নিয়ে গেলেন, তার মাইক্রোবাসে ।  ভদ্র মহিলার সাথে এক মেয়ে তার নাম খুকি।হিমুর মনে হলো এই মেয়ে মানুষ না, এ হলো হুর।
অনেক ক্ষন চলে গেলেও, হিমু এই মহিলা কে চিনতে পারলো না। মাঝ পথে হিমু নেমে গেল। যদিও মহিলা অনুনয় করছিল। তবুও হিমু তো  সব উপেক্ষা করে চলে আসতে পারে।

সে যাবে ইয়াকুব আলীর কাছে।  তিনি তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। লোকটি হুলুস্তুল  ধরনের বড় লোক। তার সাথে দেখা করতে অনেক কসরৎ করতে হলো।  শেষ পর্যন্ত তার সাথে দেখা হলো।  তার মনে হলো হসপিটালের কেবিনে পা রাখতে যাচ্ছে। ইয়াকুব আলী হিমু কে যেকারনে তলব করেছেন। হিমু সে কাজটাই ভালো পারে।

হিমু সম্পর্কিত বই গুলো যেমন সে টেনে নিয়ে যায় নিজের ক্ষমতায়।  এই গল্পটাকেও  সে নিয়ে নিয়েছে নিজের আয়ত্বে।
হিমু তো হিমুই।  তার  বইগুলোতে এমন কিছু থাকে,  তা পড়ে শেষ করার পর পাঠকও তার মতোই হতে চায়।  হিমুর যে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ব্যাপার টা আমাকে ভাবায় তার একটা সচিত্র আছে এই গল্পে।

হিমু সিরিজ শেষ করেছি বছর তিনেক আগে।  পুরনো হয়ে গিয়েছিলো আমার কাছে সব।  কিন্তু এত বড় একটা সমগ্র যখন চোখের সামনে মেলে ধরলাম।  তার প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন আমাকে সব মনে করিয়ে দিলো। 

পারাপারা  শেষ করার পর প্রথম আমি ঘুঘু পাখি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করি।  আমার আম্মু তো এসব আহলাদী একদম পছন্দ করেন না।  এটা বলতে গিয়ে আমি আরো রামধমক খেয়েছিলাম।  ভরসা ছিলো ভাইয়া।  কিন্তু তার তো সময় নাই।  এক সময় আমি ঘুঘু পাখির কথা ভুলে গেলাম।

আজ আবার মনে হলো। আম্মুকে রাগানোর জন্য বললাম কাল ভোরে উঠেই পার্কের চিড়িয়া খানায় গিয়ে খোজ নিব, ঘুঘু পাখি আছে কিনা, দেখে আসব। এত বড় একটা মেয়ে ঘুঘু পাখি দেখেনি  কেউ শুনলে হাসবে।  আম্মু কিছু বললেন না। হয়তো আগের রাগের প্রোকোপ টা এখন আর নাই।

হিমু বা হুমায়ূন পড়েছি অনেকদিন পর।  কেন জানি একটা শুন্যতা কাজ করে।  আর কোন হিমুসিরিজ পাবো না।  কোথাও থাকবে না হিমুর সেই অপেক্ষার রূপা।  আজ কয়দিন যাবত বই গুলি উল্টিয়ে গলা এখন ভারী লাগছে।  আমি কি কষ্ট পাচ্ছি!  আচ্ছা ইচ্ছা করলেই কি এই কষ্ট গুলো আমি গিলে ফেলতে পারবো? কি জানি আমি তো হিমুর মতো মহাপুরুষ নই।  নিজের উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রন নেই। আমি তার মতো এতো আবেগ হীন নই।হলে এমন হতো না। 

পারাপার এর শেষ পৃষ্ঠায়  হিমু রূপাকে প্রশ্ন করলো সে কাদঁছে কেন?  রূপা তাকে ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল জানি না কেন কাঁদছি।   গাড়ির জানালার ফাঁক দিয়ে এক টুকরো জোছনা এসে পড়েছে রূপার কোলে।জোছনার সমস্যা হলো শুধু বিভ্রম তৈরি করে।এটাই সত্যি।   পৃথিবীর সব নারীই রূপা এবং সব পুরুষই হিমু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন