বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭

বই- দ্য পার্ল

লেখক-জন স্টাইনবেক
অনুবাদ- খন্দকার মজাহারুল করিম
ধরন-উপন্যাস
পৃষ্ঠা -৭১
মূল্য-৭০
বিশ্বসাহিত্য প্রকাশনা।
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন ঔপন্যাসিক জন আর্নেস্ট স্টাইনবেক। জীবিকার জন্য অনেকবার তাকে পেশা বদল করতে হয়েছে। রিপোর্টার ছিলেন একসময়, নবিশ চিত্রকর হিসেবে ছবি এঁকেছেন, এমন কি রাজমিস্ত্রির কাজও করেছেন। কেমিস্ট হিসেবেও অভিজ্ঞতা আছে।ফলবাগানের কাজও করেছেন। তবে লেখা কে পেশা হিসেবে গ্রহন করেন ১৯৩৫ সালে। তিনি লেখার জন্য তো অবশ্যই, পত্রগুচ্ছের জন্যও অমর হয়ে থাকবেন।
দ্য পার্ল জন স্টাইনবেকের বিখ্যাত উপন্যাস। উপন্যাসের কাহিনী খুবই সংক্ষিপ্ত। মূল চরিত্র তিন জন। এক জেলে তার বৌ এবং তার সন্তান। আর কাহিনী ঘূর্ণয়ন করেছে একটা বস্তুকে নিয়ে তা হলো একটা মুক্তা।
উপন্যাসের শুরুতেই প্রধান চরিত্র কিনোর সংসার দেখা যাবে, তার বৌ আর তার বাচ্চাকে নিয়ে কিনোর সংসার। তার স্ত্রী জুয়ানা সকালেই উঠে গেছে। দোলনায় দোল খাচ্ছে শিশু পুত্র কয়োটিটো। সব কিছু স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ করে একটা দৃশ্য দেখে স্তম্বিত হয়ে গেল স্বামী স্ত্রী। যে দড়ি দিয়ে দোলনা বেধে রাখা হয়েছে, তা দিয়ে নেমে আসছে একটা বিছা। দুজনেই তাকিয়ে আছে সে দিকে। এখনো অনেক দূরে বিছাটা কিন্তু হূল ফোটাতে কতোক্ষন? আচমকা কিয়োটিটো হেসে উঠল। তার নড়ানিতে বিছা টা পড়ে গেল নিচে কিনো ধরতে চেয়েছিলো। কিন্তু আঙুলের ফাক দিয়ে সেটা পরে গেছে বাচ্চাটার উপর । পরেই হুল ফুটিয়ে দিয়েছে। কিনো বিছাটাকে সরিয়ে হাত দিয়ে পিষে ছাতু বানিয়ে ফেলল।
ততক্ষনে বাচ্চা কেঁদে উঠল যন্ত্রনায়। জুয়ানা ছেলেকে কোলে নিয়ে দেখল যেখানে দাত বসিয়ে ছিলো জায়গা টা গর্ত হয়ে গেছে। এবং সেখানে লাল আভা ছড়িয়েছে। জুয়ানা তার স্বামী কে বলল ডাক্তার ডাকতে। সবাই জানে ডাক্তার আসবে না। তাই জুয়ানা তার স্বামী কে বলল চল আমরাই যাব। একসময় তারা সেখানে পৌছাল।
কিন্তু ডাক্তার তো তাদের গোত্রের না। সে এমন গোত্রের যারা শুধু কিনোদের শোষন করে। ডাক্তার এলো না। কেন না টাকা বা ভাল মুক্তা ছিলো না কিনোর কাছে।
তারা ফিরে গেল, জুয়ানা কয়োটিটোকে শুইয়ে দিলো কম্বলে। সে প্রার্থনা করতে থাকল একটি দামি মুক্তার জন্য, যার মুল্যে সে ডাক্তার ডাকতে পারবে। শুরু হয় কিনোর সংগ্রাম, সে খুঁজে চলে মুক্তা।
এই কাহিনীর কিনো জেলের মধ্যদিয়ে ফুটে উঠেছে সারা পৃথিবীর অসহায় দরিদ্রমানুষের চিত্র। লেখক গল্পে কিনোর শৌর্য জুয়ানার প্রেম এবং চারপাশের মানুষদের লোভ হিংসা দ্বেষ ভন্ডামি স্বার্থপরতা এবং হিস্রতার চিত্র একেছেন।
কিনো সাধারন গরিব মানুষ। সমুদ্রে ডুব দিয়ে সে মুক্তা সংগ্রহ করে। ঝানু ব্যবসাহীদের কাছে বিক্রি করে অল্প দামে। তার স্ত্রী জুয়ানার চোখে সে অসাধারন পুরুষ। সমুদ্রে ঢেউ এর হিংস্রতার থেকে সে তার সংসারকে আগলে রাখে। একটা স্বচ্ছল জীবনের স্বপ্ন দেখে।
 কিনো তার বউকে দেখে অবাক হয়। ওই শান্ত, এক হারা মানুষের ভিতরটা যেন ইস্পাতের মতো। স্বভাবে সুশীলা, বিনম্র, আবার সদা আনন্দময়ী, সহিষ্ণু। সন্তান প্রসবের সময় যন্ত্রনার শরীর দুমড়ে মুছড়ে গেছে। তবুও আওয়াজ করে নি।ক্লান্তি আর খিদে চেপে রাখার জন্য কিনোর থেকে এক কাটি উপরে। ছিপ নৌকায় উঠে যখন মাছ ধরে তখন তাকে শক্তশালী পুরুষ মনে হয়।
কাহিনীর মূল থাকে এখানে, যেখানে জীবনের থেকে বেশি মূল্যবান হয় মুক্তা। একটি মুক্তাকে গিড়ে গড়ে উঠা স্বপ্ন হঠাৎ হারিয়ে যায়। তা হয়ত পাঠকের গলা ভার করে দেয়। মানুষ অনন্ত স্বপ্নের মতো তাদের আশাই বুকে লালন করতে থাকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন