বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭

বই-বিসর্জন

লেখক-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ধরন-কাব্য নাট্য
পৃষ্ঠা-৮০
মূল্য-১০০
শোভা প্রকাশনী। 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক।তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন। তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়।
তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্পও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে।রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন কাব্যনাট্যটি রচিত হয় সনাথন প্রথা ও ধর্মের বিরুদ্ধে একটি সংগ্রামী উচ্চারনে। নাটকের মূল দ্বন্দ্বটি ধর্মের অর্থহীন অন্ধসংস্কার ও চিরাচরিত যুক্তিহীন প্রথা ধর্মের বিরুদ্ধে নিত্যসত্য মানব ধর্মের। মিথ্যা ধর্মবোধের সাথে উদার মনুষ্যত্বের, হিংসার সাথে অহিংসার।
ত্রিপুরা রাজা গোবিন্দমাণিক্যের মন্দির সেবক রঘুপতি। রানী গুনবতী নিঃসন্তান। সন্তান কামনায় তিনি দেবীর কাছে সন্তান প্রার্থনা করেন। এবং কথা দেন প্রতি বছর শত শত প্রানীর রক্তে মায়ের পা ধুয়ে দিবেন। রানীর আদেশে ও মন্দির রক্ষক রঘুপতির পরামর্শে নিঃস্ব বালিকা অপর্নার ছাগশিশু কে বলি দেওয়া হয়।
সে রাজার কাছে তার সন্তান তুল্য ছাগশিশুকে হত্যার শাস্তি জানায়। রাজা অপর্ণার ব্যথা বুঝতে পারে রাজ্যে প্রাণী হত্যা নিষেধ করে দেন। রঘুপতির শিষ্য জয় সিংহ অপর্নার বেদনায় চমকে উঠে। এবং বুঝতে পারে প্রাণীহত্যার ভয়বহতা। কিন্তু আঘাত লাগে রঘুপতির অন্তর্দ্বন্ধে। সে এর বিরোধীতা করে। এবং রানী গুনবতীকেও সে ব্যবহার করে। কৌশলে রাজার ছোট ভাইকেও ব্যবহার করতে চায়।
শুরু হয় ধর্ম থেকে মানবধর্ম রক্ষা করার যুদ্ধ।
প্রধান চরিত্র জয়সিংহ, অপর্ণা, গোবিন্দ্যমানিক্য, গুনবতী, রঘুপতি।
রানী একটা ক্ষুদ্র প্রাণের জন্য ব্যকুল। এর উৎস প্রেম। কিন্তু সে তার নিজের স্বার্থ রক্ষায়। শত শত প্রান ধংস্ব করতে প্রতিজ্ঞা করে। রানীর এই প্রেম কে অবলম্বন করে রঘুপতি তার প্রথা ধর্মের নাম করে শুরু করে স্বার্থসিদ্ধির খেলা। প্রানের প্রতি প্রানের প্রেম সহজাত। কিন্তু প্রান ধংস্ব করে প্রানের ভালবাসা আশা করা মূর্খতা।রঘুপতি তার স্বার্থ রক্ষা করতে রানী গুনবতীর সন্তান কামনাকে কাজে লাগিয়েছে।
অপর্নার সন্তানতুল্য ছাগশিশু হত্যার অভিযোগে রাজা গবিন্দ্যমানিক্য জানায়, মা এসে তাকে প্রানী হত্যা বন্ধ করতে বলেছে। তাই রাজা বলি বন্ধ করেছে। কিন্তু রঘুপতি তা মানতে নারাজ।সে ছলেবলে কৌশলে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে হিংস্র হয়ে উঠে। রাজহত্যায় এমনকি ভ্রাতৃহত্যায় সে প্ররোচিত করে। নাটকের মূল হয়ে দাড়ায়, " মানব ধর্ম সত্য না প্রথা ধর্ম সত্য"।প্রানের কি মূল্য কি একদল বুঝে আরেক দল বুঝে না। বিরোধ সেখানেই। বুঝেও, মেনে নিতে চায় না স্বার্থ রক্ষায়।
রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন নাটক টি তারই উপন্যাস "রাজর্ষির" কাহিনীর নাট্যরূপ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন