বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭

বই-মায়া

লেখক-আনিসুল হক
ধরন-উপন্যাস
পৃষ্ঠা-৯২
মূল্য-১৫০
পার্ল প্রকাশনী
আনিসুল হক একজন বাংলাদেশী কবি, লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সত্য ঘটনা নিয়ে তাঁর লেখা মা বইটি বেশ জনপ্রিয়। বাংলা ভাষার পাশাপাশি বইটি দিল্লী থেকে ইংরেজি ভাষায় এবং ভুবনেশ্বর থেকে উড়ে ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।
মায়া আনিসুল হক এর একটি উপন্যাস। যা এক মেয়ের দুঃখ কাহিনী। 
মায়ার কথা আজ কাল আনিসের বড্ড মনে পড়ে। বছর ছয় সাত বছর আগের কাহিনী। আনিস কাজ করতো একটা এনজিওতে। এটা দেশি হলেও সুনাম ছিলো আন্তর্জাতিক। সে এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলো প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর হিসেবে।
হঠাৎ একদিন, অফিসের ডিরেক্টর তাকে ডেকে পাঠাল। সে গিয়ে জানতে পারল তাকে একটা কাজ দেওয়া হবে। কাজ টা হলো সুইডিশ থেকে একজন মেয়ে আসছে, তার থাকা ব্যবস্থা এবং টেইক কেয়ার করতে হবে। মোট কথা গাইড হিসেবে কাজ করতে হবে। সে সব খোঁজ খবর নিয়ে নিল। সেদিন ঠিক সময় এয়ারপোর্টে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। মেয়েটির নাম মায়া ব্যাকমান। কিন্তু যে মেয়েটা সামনে এলো সে দেখতে মোটেও সুইডিশদের মতো না। দেখতে শ্যামলার মতো। তবে মেয়েটির চোখ দুটি নজর কাড়া মায়বী। সে কারনেই মায়া নামটি সার্থক। আর বাংলাতেও কথা বলতে পারে। তার সাথে কথা বলে আনিস অবাক হলো। কেন, এটা নাকি তার বার্থল্যান্ড। সে নাকি বুদ্ধি হওয়ার পর প্রথম আসলো। তার বয়স যখন ১৮ তখন তার বাবা মা তার জন্মের কাহিনী বলে। তার জন্মের পর তার মা তাকে এক সুইডিশ দম্পতির হাতে তুলে দেয়। তার পর সে চলে যায় সুইডেন। বড় হয় সেখানে। আজ সে পরিপূর্ণ তরুনী। তাই আর আসল মায়ের খোঁজে এসেছে। আনিস অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
মায়া এক যুদ্ধ শিশু ৭১সালে বর্বরদের অত্যাচারে তার জন্ম। তার জন্মের পর তার মা তাকে কাছে রাখতে পারেনি। দূরে বহু দূরে পাঠিয়ে দিতে হয়েছে। এত দিন পর নাড়ীর টানে এসেছে। সে কি তার মাকে খুঁজে পেয়েছিলো? আনিস তাকে কতটা সহযোগীতা করতে পেরেছিলো..?
কিছু বই পড়ার আমার সব কিছু এলো মেলো হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধ আমি দেখি নি। সেটা তো শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। কিন্তু তার সেই আগুনের উত্তাপের মতো তাপ টা প্রায়ই আমি টের পাই। লেখকের কথায় মায়া একটা ফিকশন। এর চরিত্র, কাহিনী বিন্যাস সবই কাল্পনিক। কিন্তু গল্পের থিমটা কাল্পনিক নয়। এটা সত্যিই ঘটেছিলো। বাহাত্তোরে জন্ম নেওয়া যুদ্ধশিশুদের অনেকে চলে গেছে বিদেশে দত্তক হিসেবে। তাদের অনেকেই এই দেশে ফিরে আসে তাদের মায়ের খোঁজে। মায়া তাদেরই একজন। ২০০৮ সালেও এরকম যুদ্ধ সন্তান রা এসেছে বাংলাদেশে।
আর গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ যে এরকম একজন অতিথিকে তাদের আপন মানুষ হিসেবে আপনকরে নিয়েছিলো এটাও সত্যি। বাংলাদেশ অকৃতজ্ঞ নয়।
কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশটাকে বেশ নির্যাতন করেছে পাকিস্তানিরা !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন