শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

বই-নদে

লেখক-সেতিল বিয়োর্নস্তা
অনুবাদ-আনিস পারভেজ
ধরন-উপন্যাস
পৃষ্ঠা-১৭০
মূল্য-১৬৫
সন্দেশ প্রকাশনা
...
একটা ছেলে মিঠু বড়ুয়া। আছে বিচারক এর কাঠগোড়ায়। তাকে দাড়াতে বলা হল।  কিন্তু সে দাড়াবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধান্বিত।তার জন্মদিন জানা নেই এ নিয়ে বিচারকের কটুক্তি।  নরওয়েজীয়ান কারাগারে তার  জীবন এখন থমকে গেছে। একদিন এক লেখক এলো তারর সাথে দেখা করতে।  সে প্রকাশ করলো নিজের ইতিহাস  সেই লেখকের কাছে। 
আর তা নিয়েই নদের সৃষ্টি।

মিঠু বড়ুয়া বাংলাদেশী। যার সমস্ত শৈশব কেটেছে ভয়ে। কেন না তখন কার সময় চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক দূর্যোগের  ঘনঘটা। তাতে ঠিকতে  না পেরে ঢাকায় চলে আসে তাদের পরিবার। সেখানে বাবা  গোপাল জিয়া এয়ারপোর্টের পোর্টার,  বড় বোন অনামিকার  তখন  ডাক্তার হওয়ার চেষ্টা।হঠাৎ  একদিন স্মগলার রা মিঠুর বাবা কে মেরে ফেলে। বোন অনামিকা কে হারিয়ে ফেলে ইয়াসমিন হত্যার মিছিল থেকে।একা অসহায় এক বালক। ক্ষুধায় তার সঙ্গী হয় কুকুর।  তারা দুজনে খাবার খায় ডাস্টবিন থেকে। এক সময় দেখা যায় তাকে নরওয়েগামী হতে।  জীবন হয়তো মোড় নিতে পারতো। আদৌ কি নিয়েছিল..?

নদে বাংলা করলে দাড়ায় "দয়া"। নরওয়েজীয়ান লেখক সেতিল বিয়োর্নস্তার বাংলাদেশের পটভূমিতে  লেখা উপন্যাস।  বাংলাদেশের প্রকৃতি,  জীবন সংগ্রাম,  রাজনীতির কালের ইতিহাস। এর ভেতরে একটা  দরিদ্র কিন্তু উজ্জল বালকের বড় হয়ে ওঠার  সংগ্রাম এবং এ সংগ্রামে প্রতিকূল হাওয়ায়  বিপন্ন  এক চরিত্রের  চিৎকার এর অনুবাদ  এই "নদে"
লেখা হয়েছে নরওয়েজীয়ান ভাষায়।

বাংলাদেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী তো বরাবরই নিজস্ব ঠিকানা  থেকে উৎখ্যাত হয়ে একস্থান হতে অন্য স্থানে  পরিবর্তিত হয়েছে। হউক সেটা অভ্যন্তরীন হউক বাহ্যিক। তারই একটা চিত্র লেখক এখানে তুলে ধরেছেন।  মিঠুর জীবন থেকে দেশ নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।কিভাবে সে যুদ্ধে জড়ায়, কিভাবে   ব্যাংককের ট্যুরিস্টরা মিঠুর দেহ ক্ষতবিক্ষত করে দেয়..?

"নদের" শেষে থাকে এক যতিচিহ্ন,  যার মাঝে মিঠু ও পাঠক দুজনেই জীবনের মানে খুজে।  একে বলা যায় এক করুন আত্নজীবনী।এতে ধরা পড়েছে  বৈশাখী ঝড় বৃষ্টি,  রাজনৈতিক ধোকা, অস্থির চট্টগ্রাম ও ইয়াসমিন হত্যা, যুদ্ধের নির্মমতা!  আর কত শত লোকের ঘরছাড়ার হাহাকার। মূলত পাঠক বইয়ের পৃষ্ঠায় নিজের চোখে দেখে আসবে, মানুষ কতো নির্মম।  আর অাসহায় মানুষ গুলো কতো নির্যাতিত!

শেষের দুই পৃষ্ঠার এপিলোগ পাঠকের চোখ কে শীতল করে দিবে!
"ওটাই আমার জগৎ যেটা নির্ধারিত।  যে মহাতাড়না আমাকে একদিন ঘূর্ণনে ফেলেছিল,  তার সমাপ্তি হয়েছে। "

আনিস পারভেজ এর অনুবাদ বেশ ভালো ছিলো।  নরওয়েজীয়ান ভাষা থেকে এটা অনূদিত হয়েছে।
একজন নরওয়েজীয়ান এর চোখে লিখিত বাংলাদেশ।

সেতিল বিয়োর্নস্তা ইউরোপের দিকনির্দেশক কম্পোজার ও পিয়ানো বাদক এবং নরওয়ের প্রধানতম লেখক।  দেশ তাকে সম্মানিত  করেছে "সহস্রাব্দের কম্পোজার" হিসাবে। নদে তার ২৪ তম উপন্যাস। যার পটভূমি বাংলাদেশ।শৈশবে অনুবাদে রবীন্দ্রনাথ কে পড়তে গিয়ে তার চোখ ভিজেছে বারবার।  বাংলাদেশে এসেছে সে অনেকবার।আর চোখে দেখা সেই দৃশ্যপট থেকে তৈরি করেছে  এই উপন্যাস। নদে উত্তর ইউরোপের ভাষায় প্রথম এবং একমাত্র উপন্যাস বাংলাদেশ কে নিয়ে।

বই-বহুব্রীহি

লেখক-হুমায়ূন আহমেদ
ধরন-উপন্যাস
পৃষ্ঠা-১৩৬
মূল্য-৮০
আফসার ব্রাদার্স
....
বহুব্রীহি  হুমায়ুন আহমেদ এর অন্যতম একটি হাসির  উপন্যাস।লেখক নিজেই বলেছেন এই নামে তিনি একটা মজার উপন্যাস লিখবার চেষ্টা করেছেন। পাঠক হিসেবে আমি বলব, এতে তিনি সফল হয়েছেন।  এখানে কিছু অন্যধরনের কথা হাসি তামশার মাঝে আছে। কিন্তু কথার নিজস্ব উজ্জলতায় কথা গুলো হাসি তামশার মাঝেও পাঠকের চোখে ধরা পরবে।  তা ছাড়া  পুরো কাহিনী টা হাস্যরসে ভরপুর।

উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে  একটা বাড়ির সকল সদস্যদের নিয়ে।  তারা সকলেই ভিন্ন প্রকৃতির।  কারো সাথে কারো আচরনের কোন  মিল নেই। বাড়ির কর্তা সোবাহান সাহেব দুবছর হলো উকালতি থেকে রিটায়ার্ড করেছেন। উনার স্ত্রী মিনু।  আর তাদের দুই মেয়ে। বড়টা  বরিশাল মেডিকেলে পড়ে, নাম বিলু । ছোটটা অনার্স করছে ইকোনমিক্সে, নাম মিলি।আছে  দুজন কাজের লোক, রহিমার মা ও কাদের।  এছাড়া  আরেকজন হল ফরিদ,  তিনি মিলির মামা। কোনও কাজ না করে  সারাদিন শুয়ে বসে সিনেমা দেখে জীবন কাটানোই তার ইচ্ছা। আরেকটা ইচ্ছা আছে তা হলো সিনেমা বানানো। সোবহান সাহেব বাড়ির নাম দিয়েছেন "নিরিবিলি"।  কিন্ত কোন একটা কাহিনীতে এটা "নিবিরিলি" হয়ে গেছে।

এ বাসার ভাড়াটে হল আনিস। আনিসের স্ত্রী মারা গেছেন।
তাদের দুই ছেলে-মেয়ে টগর ও নিশা। এদের যন্ত্রনায় আনিস অতিষ্ট।হেন কোন শয়তানী নাই, যা তারা করে না। বাড়িওয়ালা বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছেন, তাই  আনিস ঘটনাক্রমে সোবাহান সাহেবের ছাদের দুইটা রুম ভাড়া নেয়।আর একটা চরিত্র হলো মনসুর।  ডাক্তারি পাশ করে এখন গ্রিন ফার্মেসি নামে একটা ফার্মেসিতে বসে। ফার্মেসির উপরতলায়  মালিক তার থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। একদিন ঘটনাক্রমে মিলি এই ফার্মেসিতে এসেছিলো।  সেই থেকে তাদের জানাশোনা। হঠাৎ একদিন সোবাহান সাহেবের গ্রামের বাড়ি থেকে "খোন্দকার এমদাদ সাহেব" আসেন।  সাথে তার নাতনী পুতুল। তিনি চান  পুতুল কে মনসুর ডাক্তারের সাথে বিয়ে দিতে।

সব গুলো চরিত্র নিয়ে  "নিরিবিলি" নামক এই বাড়িতে বেশ  মজার মজার ঘটনা ঘটতে থাকে।এবং কাহিনী গুলো পাঠককে আনন্দ দেবে এটা নিশ্চিত।  কিছুটা দেশপ্রম ভাব আছে।  অসাধারন একটা বই! এমনকি বইয়ের
প্রতিটা লাইন মজার। যে পড়েনি সে বড় কিছু মিস করছে। সব থেকে বড় ব্যাপার যেটা তাহলো,  স্যার এর লেখায় অন্যরকম একটা বই এই "বহুব্রীহি"  যেখানে মন খারাপের কোনও চিহ্ন নেই। চরিত্রের দিকে মিলি, বিলু দুই বোন অসাধারন। এমন কি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি।   বোন দুটোকেই ভালো লেগেছে। আনিসের ছেলে মেয়ে টগর ও নিশার দুষ্টুমিগুলোও বেশ মজার। বাচ্চা বয়েসের কৌতুহল সবটাই লেখক এদের মাঝে ঢেলে সাজিয়েছেন। সব মিলে বই টা অসাধারন!  ভালো লাগাতে বা কিছুক্ষন হাসতে  বই টা পাঠকের জন্য।

বই-বায়োবোট নিওক্স

লেখক- মোশতাক আহমেদ
ধরন-সায়েন্স ফিকশন
পৃষ্ঠা-১১২
মূল্য-১৭৫
অনিন্দ্য প্রকাশনা
....
ইক্স "ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি" ইউনিভার্সিটির "রোবটিক সায়েন্স" ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক।  ১৯বছর পড়াশোনা শেষ করে ২৭ বছর বয়সে সে রোবট তৈরির বিষয়ে অন্যতম জ্ঞানী ব্যক্তি। কিন্তু সে ক্লাস নেয় সপ্তাহে মাত্র একদিন। কেন না ইক্স এর মতো কুৎসিত, পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর একটি নেই।  তাই কর্তৃপক্ষ তেমন চায় না,  সে কলেজে বেশী সময় থাকুক।  আবার তাকে কতৃপক্ষ বাদ ও দিতে পারছে না। কারন সে অনেক মেধাবী। তার কুৎসিত হওয়ার পিছনেও একটা গল্প আছে।

তাছাড়া অনেকের এর ধারনা, ইক্স প্রথম বায়োরোবট তৈরি করবে। এমন কি এর মধ্যে সে এই ফর্মুলার অনেক কাজ সম্পাদন করে ফেলেছে। ইক্স ভালবাসে  সুন্দরী পিহিনাকে। এক সময় তারা ক্লাস মেট ছিল। এখন দুজনেই সহকর্মী। একদিন ভার্সিটিতে আসার কারন টা মূলত পিহিনা কে এক নজর দেখতে পাওয়া। কিন্তু ইক্স বুঝতে পারে,  তার এই চেহারা নিয়ে সে কারো কাছে গ্রহন যোগ্যতা পাবে না।  তবুও সে পিহিনা কে আশা করে।  এমন কি তার জন্য সে তার এই বায়োবোট এর মত অর্জন টাকেও সে পিহিনার হাতে তুলে দিতে রাজি। কলেজে পড়া কালীন সময় পিহিনা ইক্স কে সময় দিতো।  কিন্তু এখন সে বদলে গেছে অনেকটাই।

বায়োরোবট  নামটা এসেছে,  বায়োলজির প্রথম অংশ বায়ো যার অর্থ জীবন এবং রোবট এর  অংশ বোট থেকে।  এই দুটো মিলে বায়োরোবট।  যার বুদ্ধিমান মাত্রা থাকবে সাড়ে নয়,  যা কিনা মানুষের প্রায় সমান।   ইক্স তার রোবট এর নাম দিয়েছে "নিওক্স"। এই কাজ পিহিনাও করতে চেয়েছে কিন্তু ইক্স জানে পিহিনা এটা পারবে না, কারন সে ভূল ফর্মূলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবে কোন দিন বায়োবোট  তৈরি করা সম্ভব নয়।

"বায়োবোট নিওক্স" মোশতাক আহমেদ এর অন্যতম সায়েন্স ফিকশন।  একে সায়েন্স ফিকশন এর সাথে এটা একটা ভালবাসার উপন্যাস বলা যেতে পারে।  কিন্তু ততটা না হলেও এটা একটা সায়েন্স ফিকশন।  ইক্স  চেয়েছে এমন একটা  কিছু সৃষ্টি করতে যা তার সন্মাননা বয়ে আনবে।  এবং বিশ্ব জুড়ে হয়ে উঠবে সে বিখ্যত বিজ্ঞানী। 

কিন্তু কাহিনী শেষ পর্যন্ত, কোথায় গিয়ে থেমেছিল তা শুধু পাঠক ই জানবেন। বিজ্ঞান এর অজানা কিছু নেই,  আর অসাধ্য ও কিছু  নেই।কাহিনীর অনেক টা জায়গা জুড়ে  ডাক্তার ইয়ান হাস এর কৃতিত্ব আছে। আর বায়োরোবট ই বা কতো টা উন্নতি বয়ে এনেছিলো পৃথিবীর জন্য! তাও পাঠক জানতে পারবেন। সায়েন্স ফিকশন এর ভক্ত নই আমি। কিন্তু বিজ্ঞানের খুটিনাটি বিষয়ে আগ্রহ বেশ।  আর সে দিক থেকে প্রায় লেখক দের সায়েন্স ফিকশন জাতীয় বই গুলো ছেকে দেখতে বেশ ভালো লাগে ।

মোশতাক আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ফার্মাসি ডিপার্টমেন্ট থেকে এম ফার্ম ডিগ্রি অর্জন করেন। এবং ইংল্যান্ডের লেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে ক্রিমিনোলোজিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে আগ্রহী হলেও গোয়েন্দা ও ভৌতিক ক্ষেত্রেও  যথেষ্ট পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। সেই সাথে "জকি" তার জীবনধর্মী আর বহুলপ্রশংসিত একটি উপন্যাস। তিনি হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতিতেও একটা বই রচনা করেছেন।

বই-দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী

লেখক-আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
অনুবাদ-আহমাদ মাযহার
ধরন-উপন্যাস
পৃষ্ঠা-১১২
মূল্য-৮০
ষ্টুডেন্ট ওয়েজ প্রকাশনা
...
দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী হেমিংওয়ের শ্রেষ্ঠতম উপন্যাস। এই বইটার মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়েছে,  মানুষের চাহিদা ও নিয়তির মধ্যকার দন্ধ।  খুবই ছোট আকারের উপন্যাস, ও কাহিনীও একটু খানি।  কিউবার এক জেলেকে নিয়ে লেখা হয়েছে উপন্যাসটি। 

গালফ স্ট্রীমের স্রোতে ছোট্ট জেলে নৌকা ভাসিয়ে একাকী মাছ ধরে বেড়ায় বুড়ো সান্তিয়াগো। ৮৪ দিন ধরে ঘুরছে সে সমু্দ্রের বুকে,  কিন্তু কোন মাছ পায় নি ।  তার সাথে যে ছোট ছেলেটা কাজ করতো।  তার বাবা মা মনে করে বুড়ো টা অপয়া। তাই তাদের ছেলে কে অন্য নৌকায় পাঠিয়ে দেয়।  এবং ছেলেটা  ওখানে যাওয়ার ১ম সপ্তাহে  বড় বড় তিনটি মাছ ধরে ফেলল। কিন্তু প্রতিদিন  বুড়ো লোকটিকে খালি নৌকা নিয়ে ফিরতে হতো।  

বুড়ো লোকটির  রোগা-পাতলা শরীর।  গলা ও ঘাড়ের নিচে কতগুলো গভীর বলি রেখা।  সূর্যের তীব্র প্রতিফলন তার চুপসে যাওয়া গালের চামড়ায় বাদামি ফুসকুরি তুলেছে। মুখের দুপাশে নিচের দিকে নেমে গেছে সেগুলো।  দুটি হাত গভীর ক্ষত চিহ্নে ভরা। শুধু চোখ দুটো সমুদ্রের মতো নীল,  উচ্ছ্বাস ময় আর অপরাজিত।

যেখানে জেলেরা নৌকা বেধে রাখে,  সেখান দিয়ে আসার সময় ছেলেটা ডেকে উঠল,  "সান্তিয়াগো  আমি তোমার সাথে যাব।" ছেলেটি বুড়ো লোকটাকে পছন্দ করে কিন্তু তার মা বাবার জন্য পেরে উঠে না।  সান্তিয়াগো বলে উঠে,  "তুমি ভাগ্যবানের নৌকায় আছ,  ওখানেই থাকো।"

ছেলেটা  তাকে আগের দিনের কথা স্মরন করায়।  যে তারা ৮৭ দিন পরেও মাছ ধরেছিল। সে বুড়োকে বিয়ার খাওয়ার অফার করে। তাকে  সার্ডিন দিতে চায়।  এমনকি কিছু টোপও। সে তার সাথে যেতে চাইলে সান্তিয়াগো তাকে নিষেধ করে।  তাই সে অন্য উপায়ে বুড়ো কে সাহায্য করতে চায়। 
বুড়ো তাকে জানায়, পর দিন সে আরো দূরে যাবে নৌকা নিয়ে।

"দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী" হেমিংওয়ের অসাধারন এক সৃষ্টি।  যেখানে পুরো উপন্যাস টাই রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে এক বুড়োর জীবন সংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে। নিজের লক্ষ্যের দিকে একাই এগিয়ে যাওয়ার যে দৃঢ় মনোভাব তা  বুড়ো সান্তিয়াগোর চরিত্রে পাওয়া  যায়। সে বুড়ো তার অভিজ্ঞতাও অনেক,  কিন্তু তার ভাগ্য বিরূপ। তাই বলে সে ভেঙ্গে পড়েনি।  এখনও সব কিছু তার আয়ত্তে আছে,  যদিও সে বৃদ্ধ।এবং ব্যবসার সমস্ত কলা কৌশল তার জানা আছে।লক্ষ্যে সে অবিচল,  যদিও সাফল্য সুদূর পরাহত।  কিন্তু নিজের চেষ্টায় সে সুখী। 

"হেরে যাবার জন্য জন্ম হয় নি মানুষের,  বলল বুড়ো লোকটি। মানুষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে কিন্তু পরাজিত হতে পারে না কখনো "

শেষ পর্যন্ত সান্তিয়াগোর ভাগ্য কতটা পরিবর্তীত হয়েছিলো তার জন্য পুরো বইটাই পাঠক কে শেষ করতে হবে। এই উপন্যাসে  বুড়ো সান্তিয়াগোর আবির্ভাব ঘটেছে এক মহান জীবন উপলব্দি নিয়ে।  আর তা হলো,  মানুষ বুড়ো হয়ে গেলে  ভাগ্যহীনতা তাকে নত করে দিতে পারে।  কিন্তু তবুও সে সাহস হারায় না।  নিয়ম কানুন মেনে চলায় সে থাকে  বদ্ধ পরিকর।

প্রতিকূলতা নিত্যসঙ্গী, কিন্তু এই প্রতিকূলতা তার অর্জন কে ধ্বংস করে ফেললেও, সে জয় লাভ করবেই।প্রকৃতির সাথে যুদ্ধের একটা চিত্র আছে উপন্যাসে। আর সংগ্রাম টাই মুখ্য, তার মধ্যেই খুজে পাওয়া যায় জীবনের মহত্ব।আর  এই দার্শনিক উপলব্ধি  হেমিংওয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন  তার "দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী" উপন্যাসে।

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ১৯৫৪ সালে "দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী" উপন্যাসের জন্য নোবেল পুরস্কার পান।আর তখন থেকেই  তিনি বিশ্ববিখ্যাত হন।  তাঁর পুরো নাম "আর্নেস্ট  মিলার হেমিংওয়ে"। হেমিংওয়ের  সৃষ্টি গুলোতে,  যুদ্ধ,  অ্যাডভেঞ্চার,  ক্রীড়া ও স্নায়বিক উত্তেজনা এবং মৃত্যুময়তায় পূর্ণ।  আর কিছু না হলেও নিপুণ গল্পকার এবং দক্ষ ভাষাশিল্পী হিসেবে হেমিংওয়ে বিশ্বের সাহিত্য ইতিহাসে  অক্ষয়কীর্তি হয়ে থাকবেন। তিনি মার্কিন কথাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে  বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

বই-অন্ধকারের গান

লেখক-হুমায়ূন আহমেদ
ধরন-উপন্যাস
পৃষ্ঠা-৯৬
মূল্য-১২৫
অনন্যা প্রকাশনা
...
তিনি প্রশ্ন করিলেন,আলোর জন্ম কোথায়? দেবদূত উত্তর করিলেন,আলোর জন্ম অন্ধকারে।
তিনি দ্বিতীয় প্রশ্ন করিলেন, অন্ধকারের জন্ম কোথায়?
দেবদূত ক্ষণকাল নীরব  থাকিয়া কহিলেন,  আমি জানি না।
আপনার কি জানিতে ইচ্ছা করে না? দেবদূত কহিলেন,  না এই প্রশ্নের উত্তর জানিতে আমি ইচ্ছা করি না।

কিন্তু আমার জানতে ইচ্ছা করে ।  সত্যিই আমার জানতে ইচ্ছা করে। অন্ধকার এর সৃষ্টি কিভাবে..?  হুমায়ুন আহমেদ এর অন্যতম উপন্যাস হল "অন্ধকারের গান"। নামেই কেমন জানি গুমোট গুমোট ভাব। তবে এটা ঠিক নামের সাথে উপন্যাসের মিল অনেক। কিন্তু করলা তিতা জেনেও অনেকে আছেন  আমার মতো, যারা খুব তৃপ্ত সহকারে ভাত খেতে পারেন। তেমনি এই বই পড়ার পর মন টা খারাপ হয়ে যাবে জেনেও পাঠক এর অভাব হবে না। আরো  সহজ করে বললে, কাহিনী টা পুরো বুঝে ফেলার পরও আপনার ইচ্ছা হবে আরও কয়েক বার বই টা উল্টানোর। 

সমাজে কয়েক প্রকার মানুষ থাকে কেউ  বীণার বাবার মতো  ,  যারা অভাব এর থৈ খুজে পান না। আবার থাকে গণি সাহেবের মতো,  যারা টাকা খরচ করার জায়গা পায় না। বীণারা থাকে একটা পুরানো আমলের হিন্দু বাড়িতে ।  তুলসী মঞ্চ আছে,  ছোট একটা ঠাকুরঘর আছে।  এর দক্ষিনে আছে একটা কুয়া।   এটা বীণার বাবা মিজান সাহেব ,  নিত্যরঞ্জন বাবুর থেকে কিনেছেন জলের দামে। কিন্তু দখল নিতে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয়েছিলো।

বীণা,  বুলু, বাবলু,  আর লীনা  চার ভাই বোন সব সময় তটস্থ থাকে বাবার ভয়ে।   বুলু আর বীণার বি এ রেজাল্ট হয়েছে। বুলু আগের দুইবারের মতো এবারো ফেল করেছে। অথচ বীণা বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে। বুলুর ফেল করার চাপটা পরিবারের সবার উপর  আসবে বলে বীণা ভয় পাচ্ছে।  বীণা জানে বুলু অনেক চেষ্টা করেছে। তবুও সে পারে নি।আর তাই  বাবার ভয়ে সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে।

বীণার দাদা দাদীও ছিলেন বীণাদের সাথে।  গ্রাম থেকে আসায় এখানে থাকতে তাদের খুব  কষ্ট হচ্ছিলো। বীণার বান্ধবী অলিক ।  বীণার সাথে বেশ কৌতুক করেই  অলিকের বন্ধুত্ব হয়েছিল। অলিক এর মা মারা গেছেন কিছু দিন আগে। অলিক ভাবে সেও খুব তাড়াতাড়িই মারা যাবে। কেন না তার মায়ের অসুখ টা তার ও হয়েছে বোধহয়। আর একটি  চরিত্র হলো, ওসমান গনি ।তিনি মেঘনা এন্টারপ্রাইজের মালিক।

কোন নির্দিষ্ট নায়ক বা নায়িকা নেই উপন্যাসে।  তবে সব গুলো চরিত্র সক্রিয়। অন্ধকারের একটা ছায়া পুরো উপন্যাস জুড়ে।  তবুও আমার বেশ ভালো লেগেছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করেই কিছু কষ্ট পেতে ভালো লাগে।  মনে হয় এখন  কিছু কষ্ট আমার পাওয়া উচিৎ। তাহলে বোধ হয় ,  ভেতর টা হালকা লাগবে। সেই সময়টায় আমার এই বই টা  খুব দরকারি মনে  হয়। ভালো লাগে বীণা কে,  বুলু কে এমন কি শেষ দিকে ভালো লাগে তার বাবাকেও।